2nd Semester Suggestion HISTORY ( with Answer ) || CU 2nd Semester Suggestion || CU Semester System || Banglarshiksa( বাংলার শিক্ষা )
History Suggestion for Second Semester of Calcutta University under CBCS System
History Suggestions( BA General ) with Answer
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সাজেশন ( উত্তরসহ )
BA ( General 2nd Semester )
( প্রতিটি প্রশ্নের মান ১০ )
প্রশ্নঃ শাসক হিসেবে সমুদ্রগুপ্তের কৃতিত্ব আলোচনা কর। ( 10 )
উত্তর
ভারতীয় নেপোলিয়ন
সমরকুশলী সেনাপতি,
ব্যক্তিত্বসম্পন্ন প্রশাসক, প্রজাহিতৈষী রাজা এবং বিদ্যোৎসাহী মানুষ রূপে সমুদ্রগুপ্তের
নাম ভারত-ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। গুপ্ত সম্রাটদের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রধান পুরুষ।
সমুদ্রগুপ্তের প্রতিভাবলেই একটি আঞ্চলিক রাজ্য সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। যোদ্ধা হিসেবে
তাঁর কৃতিত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে ড. স্মিথ সমুদ্রগুপ্তকে ‘ভারতীয় নেপোলিয়ন' বলে আখ্যায়িত
করেছেন।
উপাদান
সমুদ্রগুপ্তের
রাজত্বকাল সম্বন্ধে প্রধান উপাদান হল, তার সভাকবি হরিষেণ বিরচিত এলাহাবাদ-প্রশস্তি’
বা ‘হরিষেণ-প্রশস্তি', মধ্যপ্রদেশে প্রাপ্ত এরাণ লিপি', সমুদ্রগুপ্তের মুদ্রাসমূহ এবং
চৈনিক পরিব্রাজকদের ‘বিবরণ প্রভৃতি।
>রাজত্বকাল :
‘হরিষেণ-প্রশস্তি
থেকে জানা যায়, প্রথম চন্দ্রগুপ্ত তার উত্তরাধিকারী রূপে সমুদ্রগুপ্তের নাম ঘোষণা
করে গিয়েছিলেন। অনেকে এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সমুদ্রগুপ্তের সমসাময়িক ‘ক’
নামক এক রাজার স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেছে। অনেকে বলেন, কচ এবং সমুদ্রগুপ্ত পৃথক ব্যক্তি।
আবার অনেকের মতে, উভয়ে অভিন্ন। কারণ ‘কচ’ সর্বরাজোচ্ছেত্তা উপাধি ধারণ করেছিলেন, যা
সমুদ্রগুপ্তও ধারণ করেছিলেন। সমুদ্রগুপ্ত সম্ভবত ৩২৫ (মতান্তরে, ৩৩০) খ্রিস্টাব্দে
সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং ৩৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
অশ্বমেধযজ্ঞ
অনুষ্ঠান
অসামান্য সামরিক
প্রতিভাবলে সমুদ্রগুপ্ত অশ্বমেধযজ্ঞের আয়োজন
| করেছিলেন। দক্ষিণ-ভারত বিজয়শেষে সমুদ্রগুপ্ত
অশ্বমেধযজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। এই উপলক্ষ্যে তিনি বিশেষ একধরনের স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন
করেন। এই মুদ্রার একদিকে ছিল যজ্ঞের ঘোড়ার প্রতিকৃতি ও অপরদিকে ছিল রাজমহিষী দত্তাদেবীর
প্রতিকৃতি। এছাড়া নিজ সার্বভৌম ক্ষমতার প্রমাণস্বরূপ। সমুদ্রগুপ্ত ‘সর্বরাজোচ্ছেত্তা’,
‘অপ্রতিরথ প্রভৃতি উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। | এইভাবে যুদ্ধজয় ও অধীনতামূলক মিত্ৰতা দ্বারা
সমুদ্রগুপ্ত যে সাম্রাজ্য গঠন করেছিলেন, তার সীমানা পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে পশ্চিমে
পাঞ্জাব এবং উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে নর্মদা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
সুশাসক
কেবল সুযোদ্ধা
নয়, সুশাসক হিসেবেও সমুদ্রগুপ্তের যথেষ্ট
খাতি ছিল। তিনি ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শাসক। তাই অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত উত্তরের রাজ্যগুলিকে
তার প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে এনেছিলেন, কিন্তু দূরবর্তী দক্ষিণের রাজ্যগুলোকে অধীনতা স্বীকারের
পরিবর্তে তাদের স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নিয়েছিলেন। তিনি বৈদেশিক প্রভাবমুক্ত এক সম্পূর্ণ
ভারতীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। তার শাসনে রাজার একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও
তা ছিল প্রজানুরঞ্জক। তার সুশাসনে দেশের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য ও সংহতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল।
মুদ্রা প্রণয়নের ক্ষেত্রেও তিনি বিশিষ্টতার স্বাক্ষর রাখেন। সমুদ্রগুপ্ত সম্পূর্ণ
বিদেশী প্রভাবমুক্ত মুদ্রার প্রচলন করেন।
অন্যান্য গুণাবলী
বিদ্যোৎসাহী, সুকবি ও সুসঙ্গীতজ্ঞ রূপেও তার যথেষ্ট
খ্যাতি ছিল। তিনি বহু কাব্য রচনা করেছিলেন।
বীণাবাদনরত মূর্তিসম্বলিত মুদ্রা থেকে সমুদ্রগুপ্তের সঙ্গীতপ্রীতির পরিচয় পাওয়া যায়। এলাহাবাদ-প্রশস্তি’তে তাকে ‘কবিরাজ’
বলে অভিহিত করা হয়েছে। বিদ্বানের প্রতি চি তার গভীর শ্রদ্ধা। মৃদু হৃদয় সমুদ্রগুপ্তের
মন দয়ায় পরিপূর্ণ ছিল। শাস্ত্রতত্ত্বে তাঁর বিশেষ জ্ঞান ছিল। হরিষেণ তাকে এই কারণে
নারদ’ ও ‘বৃহস্পতির সাথে তুলনা করেছেন। | ধর্মবিষয়ে তিনি ছিলেন উদার। ব্রাহ্মণ্যধর্মাবলম্বী
হলেও তিনি অপরাপর ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। সিংহল-রাজ মেঘবর্ণকে বোধগয়ায় বৌদ্ধমঠ
নির্মাণের অনুমতি দান বা বৌদ্ধশাস্ত্রজ্ঞ বসুবন্ধকে উচ্চ-রাজপদে নির্বাচন তার পরধর্মসহিষ্ণুতার
পরিচয় বহন করে।
*** প্রশ্ন: দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের
রাজত্বকাল সম্পর্কে আলাচোনা কর। ****
উত্তর
ভারতে
গুপ্তবংশের ইতিহাসে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত এক বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। তিনি ছিলেন বীর
যোদ্ধা ও সুদক্ষ শাসক। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার
তার বহুমুখী প্রতিভার প্রশংসা করে বলেছেন, “দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত যে বিশাল সাম্রাজ্য
তিনি পরবর্তী বংশধরদের জন্য রেখে | গিয়েছিলেন, তা তার অনন্যসাধারণ সামরিক প্রতিভা,
প্রশাসনিক দক্ষতা ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক।
> সিংহাসন লাভ
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত সম্ভবত ৩৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত
রাজত্ব করেছিলেন। তবে পিতা। সমুদ্রগুপ্তের পরেই সিংহাসনে বসেছিলেন, নাকি জনৈক রামগুপ্তের
পরে সিংহাসনে বসেছিলেন—এ সম্পর্কে মতভেদ আছে। কারণ, সমুদ্রগুপ্তের ‘অনুশাসন-লিপি’তে
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মনোনয়নের কথা উল্লিখিত আছে। অধুনা বিদিশায় রামগুপ্তের নামাঙ্কিত
লিপি পাওয়া গেছে। এতে ‘মহারাজাধিরাজ। রামগুপ্ত’ নাম খোদিত আছে। যাইহোক, এ বিষয়ে বিতর্কের
অবকাশ আছে।
> বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন ও সাম্রাজ্যগঠন
গুপ্তবংশের প্রভাব-প্রতিপত্তি
বৃদ্ধির জন্য দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ‘বৈবাহিক
সম্পর্ক স্থাপন’ ও ‘যুদ্ধযাত্রা' —এই দুটি নীতি অবলম্বন করেছিলেন। তিনি . স্বয়ং নাগবংশীয়
রাজকন্যা কুবের নাগকে বিবাহ করেন। কুন্তলের কদম্ববংশের কাকুৎস বর্মনের কন্যাকে নিজ পুত্রবধূ করে আনেন এবং নিজকন্যা প্রভাবতী গুপ্তকে
বকাটক রাজা দ্বিতীয় রুদ্রসেনের সঙ্গে বিবাহ | দেন। স্মিথের মতে, এই বৈবাহিক সম্বন্ধ-শৃঙ্খল
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের হাত দৃঢ় করেছিল। তার মতে, পশ্চিম-ভারতের শক্তিকে পরাজিত করার
জন্য নাগ ও বকাটক বংশের সহায়তা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের
অবশ্য প্রয়োজন ছিল। গুপ্তসম্রাটের
বিরুদ্ধে বকাটকরা বাধা না-দেওয়ার ফলে চন্দ্রগুপ্ত শত্রুদের সহজে | পরাস্ত করেন। তা ছাড়া বকাটক মৈত্রী থাকার
ফলে ভবিষ্যতে শত্ৰুশক্তির পক্ষে বিদ্রোহ করা সম্ভব হয়নি। শুধু তাই নয়, বিবাহের অল্পকালের
মধ্যে দ্বিতীয় রুদ্রসেনের অকালমৃত্যু ঘটলে প্রভাবতাহ বকাটক রাজ্যের শাসনকর্তীতে পরিণত
হন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বকাটক রাজ্যে গুপ্তদের প্রভাব বৃদ্ধি | পায়।
>শকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের
সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য সামরিক কৃতিত্ব হল মালব, গুজরাট ও কাথিয়াবাড় অঞ্চল থেকে শদের
বিতাড়ন। তিনি যে শদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেছিলেন, তার প্রমাণ সমকালীন কয়েকটি
লেখতে পাওয়া যায়। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সন্ধিবিগ্রহিক’ বীরসেন-এর ‘উদয়গিরি গুহালিপি
থেকে জানা যায়, যখন তিনি (বীরসেন) তার প্রভুর সাথে উদয়গিরিতে গিয়েছিলেন,
** * প্রশ্নঃ - গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসনব্যবস্থার বিবরণ দাও। ***
উত্তর
কেবল বৃহৎ সাম্রাজ্যগঠন নয়,
সেই সাম্রাজ্যকে সুশাসনের দ্বারা সংহত ও সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রেও গুপ্ত রাজারা যথেষ্ট
দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন।
> রাজার দৈবসত্ত্বঃ
গুপ্ত শাসনব্যবস্থার প্রধান
পুরুষ ছিলেন সম্রাট। তিনি ছিলেন আইন, বিচার ও প্রশাসনের সর্বময় প্রভু। গুপ্ত রাজারা
‘দৈবসত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। তারা পরমভট্টারক’ ‘অচিন্ত্যপুরুষ, ‘পরমেশ্বর’, ‘মহারাজাধিরাজ’
প্রভৃতি উপাধি গ্রহণ করতেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মৌর্য রাজারা দৈবসত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন
না। পরম দৈবত’ হলেও গুপ্ত রাজারা রাষ্ট্র ও প্রজাসাধারণের কল্যাণকে নিজেদের অবশ্য কর্তব্য
বলে মনে করতেন।
> মন্ত্রী
সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেও গুপ্ত রাজারা স্বেচ্ছাচারী
ছিলেন না। বিভিন্ন স্তরের বহুসংখ্যক কর্মচারীর মাধ্যমে গুপ্ত রাজারা শাসন পরিচালনা
করতেন। তা ছাড়া, রাজা ইচ্ছামত আইন প্রণয়ন করতে পারতেন না। ধর্মশাস্ত্রের নির্দেশ
অনুযায়ী শাসনরীতি গ্রহণে তিনি বাধ্য ছিলেন। সর্বোপরি স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন সংস্থাগুলি
বা বণিক-কারিগরদের নিগমগুলি (guilds) স্থানীয় ও স্ব স্ব স্বার্থসংক্রান্ত কাজে যথেষ্ট
ক্ষমতা ভোগ করত।
> কেন্দ্রীয়
শাসন
কেন্দ্রে রাজাকে সাহায্য করার জন্য মন্ত্রী, যুবরাজ
ও রাজকর্মচারী নিযুক্ত হতেন। মন্ত্রীরা ছিলেন সর্বোচ্চ রাজকর্মচারী। এছাড়া, মহাবলাধিকৃত
বা প্রধান সেনাপতি, মহাপ্রতিহার বা দ্বাররক্ষক, মহাদণ্ড নায়ক বা সেনাপতি, সন্ধিবিগ্রহিক
বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রভৃতি ছিলেন উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রীয় রাজকর্মচারী। অক্ষ-পটলাধিকৃত
নামক কর্মী সরকারি দলিলপত্র রচনা ও রক্ষা করতেন।
কুমারমাত্য ও আয়ুক্ত নামক
কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাসনের মধ্যে যোগসূত্র বজায় রাখতেন। সম্ভবত যুবরাজ
কুমারেরা এই পদে নিযুক্ত হতেন।।
> ‘দেশ’ বা
‘ভুক্তি’
: শাসনকার্যের সুবিধার জন্য গুপ্ত সাম্রাজ্য কয়েকটি
প্রদেশে বিভক্ত ছিল। এগুলিকে বলা হত ‘দেশ’ বা ‘ভুক্তি’। যেমন—সৌরাষ্ট্র দেশ, সুকুলি
দেশ, তীরভূক্তি, পুণ্ড্রবর্ধনভুক্তি, অহিচ্ছত্রভুক্তি প্রভৃতি। দেশ’-এর শাসনভার ‘গোপলি
এবং ভুক্তির শাসনভার ‘উপরিক মহারাজ নামক কর্মচারীদের ওপর ন্যস্ত ছিল। দেশের শাসনভার
মাঝে মধ্যে রাজকুমারদের হাতে দেওয়া হত। এরা মহারাজপুত্র- দেবভট্টারক’ উপাধি গ্রহণ
করতেন।
> ‘বিষয়
বা জেলা
প্রতিটি প্রদেশ আবার একাধিক
বিষয় বা জেলায় বিভক্ত ছিল। এ শাসনভার ছিল ‘বিষয়পতি’ বা আয়ুক্তদের ওপর। বিষয়পতিরা
অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাদেশিক = নির্বাচিত ও নিয়ন্ত্রিত হতেন। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে
সম্রাট স্বয়ং ‘বিষয়পতি’দের নিয়োগ বিষয়পতিদের সাহায্য করার জন্য অধিকরণ বা পরিষদ
নামক একটি বেসরকারি সভা থাকত। ব্যবসায়ী, নগরশ্রেষ্ঠী, প্রধান কারিগর প্রভৃতিদের নিয়ে
এই সভা গঠিত হত। তবে এই ব্যবস্থা নিংস গুপ্ত রাজাদের উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় বহন
করে। এদের পরামর্শক্রমে শাসনকার্য পরিচালিত।
> গ্রাম
গুপ্ত শাসনব্যবস্থার সর্বনিম্ন একক ছিল গ্রাম। এর
শাসনভার ছিল গ্রামক বা গ্রামাদ নামক কর্মচারীদের ওপর। গ্রামের বয়োবৃদ্ধদের নিয়ে গঠিত
সভা, ‘পঞ্চমণ্ডলী’ নানা বিষয়ে পরাম দিয়ে গ্রামিককে সাহায্য করত।
> নগরশাসন
গুপ্তযুগে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন-ব্যবস্থা সম্পর্কে
বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে বৃহৎ নগরগুলিতে এক ধরনের স্থানীয় প্রতিনিধি-সভা মারফত
শাসন পরিচালনা করা হত। এগুলিকে বলা হত ‘নিগম সভা। এই সভার পরামর্শক্রমে পুরপাল’ নগরশাসন
পরিচালনা করতেন। কোন কোন ক্ষেত্রে পুরপাল-উপরিক’ উপাধিধারী কর্মচারীর উল্লেখ পাওয়া
যায়।
বিচারব্যবস্থা
:
গুপ্তযুগে ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিচার পৃথকভাবে সম্পন্ন
হত। প্রদেশ ও জেলাসমূহে সরকারি বিচারালয় স্থাপিত ছিল। এই যুগে কাত্যায়ন, বৃহস্পতি,
যাজ্ঞবল্ক্য প্রমুখ আইনগ্রস্ত লিপিবদ্ধ করেছেন। রাজা ছিলেন সর্বোচ্চ বিচারক। গ্রামে
ও জেলায় স্থানীয় সভাগুলি বিচারকার্য সম্পন্ন করত। গুপ্ত যুগে এক ধরনের গণআদালতের
অস্তিত্ব ছিল। ফা-হিয়েনের বিবরণ থেকে জানা যায়, সে যুগে দণ্ডদানের কঠোরতা হ্রাস পেয়েছিল।
> রাজস্ব
রাজস্ব হিসেবে উৎপন্ন ফসলের এক-ষষ্ঠাংশ রাজকোষে জমা
দিতে হত। এ ছাড়া, কর্মচারীদের বেতনের ওপর কর, বাণিজ্য ও শিল্পদ্রব্য থেকে শুল্ক, ফেরীঘাট
থেকে কর প্রভৃতি রাজস্ব হিসেবে আদায় করা হত। ভূমি-রাজস্বকে বলা হত ‘ভাগ।‘বিষ্টি নামক
‘বেগার গ্রহণ’ তখন রীতি ছিল। যুদ্ধ ইত্যাদি প্রয়োজনে ‘মল্লকর’ নামক অতিরিক্ত কর আদায়
করা হত।
> সেনাবাহিনী
গুপ্ত রাজাদের এক সুবিশাল, সুশিক্ষিত ও সুনিয়ন্ত্রিত
সেনাবাহিনী ছিল। পূর্বের মতো এই বাহিনী পদাতিক, অশ্ববাহিনী, হস্তিবাহিনী ও নৌবাহিনী—এই
চারভাগে বিভক্ত ছিল। উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মচারীদের মধ্যে মহাদণ্ডনায়ক, মহাবলাধিকৃত,
সন্ধিবিগ্রহিক প্রভৃতি ছিলেন প্রধান। সে যুগে প্রধান যুদ্ধাস্ত্র ছিল বর্শা, তীর-ধনুক,
কুঠার, তরবারি প্রভৃতি। গুপ্তযুগে নৌ-বাহিনী যে বেশ শক্তিশালী ও সংহত ছিল তার বহু প্রমাণ
পাওয়া যায়।।
উপরিলিখিত আলোচনা থেকে একথা
নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, গুপ্ত শাসনব্যবস্থা ছিল সুনিয়ন্ত্রিত | ও সুসংগঠিত। এর
বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন। এইরূপ জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা
থাকার ফলেই দীর্ঘকাল বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল।
**** প্রশ্নঃ - পালযুগে
বাংলার শিল্প ও ধর্ম সম্পর্কে কি জানো ***
উত্তর
পাল আমলে বাংলার স্থাপত্য শিল্পেও
নবযুগ সূচিত হয়েছিল ; স্বতন্ত্র নির্মাণশৈলীর জন্য পরবর্তী কয়েক শতক বাংলার শিল্প
‘পালযুগের শিল্প’ নামে অভিহিত হত।
> স্থাপত্য
পালযুগে স্থাপত্য, শিল্প-নিদর্শনের অধিকাংশই ধ্বংস
হয়ে গেছে। তবুও ধ্বংসস্তুপ থেকে যে নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে, তা আমাদের বিস্মিত করে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ও তিব্বতের বহু বিহার পালযুগে নির্মিত ‘সোমপুর বিহার ও ‘উদন্তপুর’
বিহারের অনুকরণে নির্মিত হয়েছিল বলে পণ্ডিতদের ধারণা।‘সোমপুর বিহারটি ছিল সম্ভবত পাঁচতল
ও ষোলো কোণবিশিষ্ট। চারদিকে ছিল চারটি সিংহদরজা ও চারটি গর্ভগৃহ। এছাড়া, পাহাড়পুরের
বিহারটিও ছিল পালযুগের অনন্য কীর্তি। ড. নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, এটি ছিল প্রাচীন বাংলার
স্থাপত্যশিল্পের বিস্ময়।
> ভাস্কর্য
ও চিত্রশিল্প :
পালযুগের ভাস্কর্যের প্রধান ক্ষেত্র ছিল সাধারণ মানুষের
জীবনধারা ; দেব-দেবীর নয়। পোড়ামাটি ও কালো পাথরের ওপর নির্মিত এইসব মূর্তি ছিল স্বাভাবিক
ও সজীব। এছাড়া, ব্রোঞ্জ ও পাথর খোদাই করেও ভাস্কর্য নির্মিত হত। চিত্রশিল্পেও পালযুগ
অগ্রণী ছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মহাযান-বজ্রযান-হীনযান প্রভৃতি বৌদ্ধধর্মকে কেন্দ্র
করে চিত্রগুলি রচিত হয়েছিল। চিত্রগুলিতে কল্পনার বিস্তার, রঙের বিন্যাস, রেখার প্রয়োগ
সবই ছিল দীর্ঘ ও প্রশস্ত। এই চিত্রগুলির রচয়িতাগণ
নিঃসন্দেহে প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক ছিলেন। পালযুগের দুজন সর্বশ্রেষ্ঠ ভাস্কর্য
ও চিত্রশিল্পী ছিলেন বীতপাল ও ধীমান।
> ধর্ম :
পালযুগে ধর্মের ক্ষেত্রেও পুনরুজ্জীবনের
আভাস পাওয়া যায়। পালরাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধধর্মের পুনরুত্থান ঘটেছিল। এই সময়
নির্মিত হয়েছিল বহু বৌদ্ধমঠ ও বিহার। বৌদ্ধ আচার্য অতীশ দীপঙ্কর (শ্রীজ্ঞান) পাল-রাজাদের
পৃষ্ঠপোষকতায় তিব্বতে বৌদ্ধধর্ম প্রচারে গমন করেছিলেন, তবে কোনরূপ ধর্মীয় গোঁড়ামি
পালরাজাদের ছিল না।
এইভাবে রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য
ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে পালযুগে বাংলার অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছিল। তাই ড. স্মিথ যথার্থই
বলেছেন, “ভারতের রাজবংশগুলির ইতিহাসে বাংলার পালবংশ বিশেষভাবে দাবি রাখে। তার ভাষায়
: “The Paul dynasty deserves to be remembered as one of the most remarkable of
the Indian dynasties.”
***** প্রশ্নঃ - কনৌজের অধিকারকে কেন্দ্র করে ত্রিশক্তি সংগ্রামের
বিবরণ দাও ****
উত্তর
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে অন্যতম নগরী কনৌজের উপর অধিকার
স্থাপন করার প্রশ্নকে নিয়ে তিনটি প্রখ্যাত রাজবংশ—প্রতিহার, রাষ্ট্রকুট ও পালবংশীয়
রাজারা প্রায় দুশত বছর ধরে অবিরাম সংঘর্ষে নিযুক্ত থাকেন।
> ভূমিকা
প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে বর্তমান উত্তর প্রদেশের
ফাকদাবাদ জেলায়। অবাস্থত ‘মহোদয়’ বা কনৌজ একদা ‘সাম্রাজ্যবাদের আসন ও প্রতীক’-এ পরিণত
হয়েছিল। কনৌজের রাজনেতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে হর্ষবর্ধন কর্তৃক সেখানে রাজধানী
স্থাপনের পর থেকে।
পরে মৌখরীবংশীয় জনৈক যশোবর্মনের
আমলে গুরুত্ব ও মর্যাদা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়। অষ্টম . নবম শতকে কনৌজের রাজনৈতিক গুরুত্ব
অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়।
> কনৌজের
গুরুত্ব
কনৌজের গুরুত্ব বৃদ্ধির পেছনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক
কারণ বিদ্যমান ছিল। মৌর্য বা গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পরে ‘সাম্রাজ্যের সংজ্ঞা কিছুটা
সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। সমগ্র ভারতবর্ষে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব স্থাপনের পরিবর্তে শুধুমাত্র
উত্তর-ভারতে বা শুধুমাত্র দক্ষিণ-ভারতে একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপনকেই তৎকালীন নরপতিরা
লক্ষ্য হিসেবে স্থির কয়ে নিয়েছিলেন। হর্ষবর্ধনের পরবর্তীকালে উত্তর-ভারতের রাজনৈতিক
কর্তৃত্ব স্থাপনই উচ্চাকাঙ্ক্ষী নরপতিদের লক্ষ্যে পর্যবসিত হয়েছিল এবং উত্তর-ভারতের
কর্তৃত্বের প্রশ্নে কনৌজের ওপর অধিকার স্থাপন করা ছিল মর্যাদার প্রতীক। একইভাবে কনৌজের
অর্থনৈতিক গুরুত্বও ভারতীয় রাজাদের কনৌজ দখলে প্ররোচিত করেছিল। কনৌজ যার দখলে থাকবে
তার পক্ষে গাঙ্গেয় উপত্যকা অঞ্চলের উর্বর ভূমির সম্পদ আহরণ করা সহজসাধ্য হত। এইসব
কারণে অষ্টম শতকে কনৌজ। দখলের প্রশ্নে এক দীর্ঘস্থায়ী ত্রি-শক্তি সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল।
এই ত্রিশক্তি ছিল উত্তর-ভারতের পালবংশ ও গুর্জর প্রতিহার বংশ এবং দক্ষিণ-ভারতের রাষ্ট্রকূট
বংশ। এই ত্রি-শক্তি সংগ্রাম প্রায় দুইশত বৎসর স্থায়ী হয়েছিল।
অষ্টম শতকের শেষ পাদে পাল,
প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূট বংশ প্রতিপত্তিশালী হয়ে ওঠে এবং স্ব স্ব । ক্ষমতা বিস্তারের
উদ্যোগ নিলে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। কনৌজের অধিকারকে। কেন্দ্র করে উত্তরের
পাল ও প্রতিহার শক্তির সংঘর্ষ ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু দক্ষিণের রাষ্ট্রকূট শক্তি এই
দ্বন্দ্বে যোগদান করে এর গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। সম্ভবত রাষ্ট্রকূটগণ উত্তর-ভারতে পাল
বা প্রতিহার কোন একটি শক্তিকে একচ্ছত্র হতে দিতে চায়নি। কারণ সেক্ষেত্রে ঐ শক্তি দ্বারা।
দক্ষিণ-ভারতে রাজ্য বিস্তারের সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারত। তাই রাষ্ট্রকূটরা প্রতিরোধমূলক
পন্থা। হিসেবে কনৌজের দিকে হাত বাড়িয়েছিল।
> প্রথম সংঘর্ষ
দীর্ঘস্থায়ী ত্রি-শক্তি সংঘর্ষের ক্রমপরম্পরা নির্ণয়
করা কঠিন। সম্ভবত কনৌজকে কেন্দ্র করে পাল ও প্রতিহার শক্তির মধ্যে প্রথম যুদ্ধ হয়।
বাংলাদেশের পালরাজা ধর্মপাল নিজ ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত করার পর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে
শুরু করেন। একই সময়ে প্রতিহার-রাজ বস মধ্য-ভারতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে পূর্ব দিকে
অগ্রসর হতে শুরু করেন। ফলে উভয়ের
মধ্যে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে
পড়ে। গাঙ্গেয় দোয়াব অঞ্চলের যুদ্ধে ধর্মপাল প্রতিহার-রাজ বৎসের | নিকট পরাজিত হন।
প্রতিহাররাজের জয়লাভ ও ক্ষমতাবৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে রাষ্ট্রকূটরাজ ধ্রুব উত্তর-ভারত
অভিযান করেন। বৎস পরাজিত হন ধ্রুবর হাতে। অতঃপর বৎসরাজ রাজপুতনার মরু অঞ্চলে পালিয়ে
যান। রাষ্ট্রকূটরাজ ধ্রুব দোয়াব পর্যন্ত অগ্রসর হন এবং ধর্মপালকেও পরাজিত । করেন।
| এই যুদ্ধে বস্তুত লাভবান হন ধর্মপাল। কারণ ধ্রুবর হাতে পরাজিত হবার ফলে বৎসরাজ কনৌজ
ছেড়ে চলে যান। আবার ধ্রুব কনৌজ দখল করেই দক্ষিণ-ভারতে ফিরে যান। এই সুযোগ নেন ধর্মপাল।
তিনি খুব সহজে কনৌজ দখল করেই দক্ষিণ-ভারতে ফিরে যান। ধর্মপাল কনৌজের। সিংহাসন থেকে
ইন্দ্রায়ুধকে বিতাড়িত করে নিজ অনুগত ব্যক্তি চায়ুধকে বসান। খালিমপুর | লিপি’ থেকে
ইন্দ্ৰায়ুধকে বিতাড়িত করে নিজ অনুগত ব্যক্তি চক্ৰায়ুধকে বসান। খালিমপুর লিপি’
থেকে জানা যায়, ধর্মপাল কনৌজে
এক দরবার আয়োজন করলে উত্তর-ভারতের বহু রাজা উপস্থিত হয়ে তার প্রতি বশ্যতা জ্ঞাপন করেন।
প্রশ্নঃ - মাৎস্যন্যায় বলতে কি বোঝো ?
উত্তর
গৌড়াধিপতি শশাঙ্কের মৃত্যুর পর (৬৩৭ খ্রিঃ) গৌড়বঙ্গে
এক চরম অরাজক অবস্থার সষ্টি হয়েছিল। বাংলায় পালবংশের প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত প্রায়
একশত বৎসর ধরে এই অরাজক অবস্থা চলতে থাকে। আর্যমঞ্জুশ্রী মূলকল্প’ গ্রন্থ থেকে জানা
যায়, তখন গৌড়-রাজ্য ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে একাধিক ক্ষুদ্র ও দুর্বল রাজ্যের উৎপত্তি
ঘটেছিল। হিউয়েন-সাঙ বাংলা পরিভ্রমণে এসে (৬৩৮ খ্রিঃ) পুণ্ডবর্ধন’ (উত্তরবঙ্গ)—এই চারটি
স্বাধীন রাজ্যের অস্তিত্ব লক্ষ্য করেন। এইসব রাজ্যের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদ লেগেই ছিল।
অনিয়ম-অনাচার ছিল স্বাভাবিক ঘটনা আর ছিল গৃহযুদ্ধ, দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার। এইরূপ
অভ্যন্তরীণ অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে একাধিক বৈদেশিক শত্রুর | আক্রমণ বাংলার জনজীবনকে
দুর্বিষহ করে তোলে । একই সময়ে উত্তর ও পর্ব-ভারত তিব্বতীয়
অভিযানে পর্যদস্ত হয়। কনৌজের
যশবর্মন ও কাশ্মীররাজ ললিতাদিত্য পুনঃপুন আক্রমণে বাংলাকে ক্ষতবিক্ষত করে তোলে । তিব্বতীয়
ঐতিহাসিক লামা তারানাথ তৎকালীন বাংলার অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন, “তখন বাংলার
কোন রাজা ছিল না, প্রত্যেক ক্ষত্রিয় ব্রাহ্মণ, সামন্ত ও বণিক নিজ নিজ এলাকায় স্বাধীনভাবে
রাজত্ব করতেন। ফলে জনসাধারণের দুর্দশার অন্ত ছিল না।” শশাঙ্কের মৃত্যু ও পালবংশের অভ্যুত্থানের
মধ্যবর্তীকালীন বাংলার এই অরাজক অবস্থাকে সমসাময়িক লিপি | ও কাব্যে ‘মাৎস্যন্যায়
বলে বর্ণনা করা হয়েছে। পুকুরের বড়ো মাছ যেমন
ছোটো মাছকে নির্বিচারে | গ্রাস করে, তেমনিই
অরাজকতার সুযোগ বাংলাদেশে সবলেরা দুর্বলের
ওপর অত্যাচার চালাত। একেই বলা হত মাৎস্যন্যায়।
প্রশ্নঃ - চোলদের স্থানীয়
স্বায়ত্ত শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর।
উত্তর
চোল শাসনপদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট ছিল স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন।
তখন গ্রামীণ প্রতিষ্ঠান যেভাবে স্বাধীনতা ভোগ করত, তা আমাদের বিস্মিত করে। গ্রামের
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ভোটে নির্বাচিত প্রাথমিক সমিতির মাধ্যমে গ্রামশাসন চলত। এই
সমিতিগুলি ছাড়াও একাধিক ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক গোষ্ঠী ছিল। গোষ্ঠীর তুলনায়
গ্রাম-সমিতির দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল অনেক বেশি। তে গোষ্ঠীর সদস্যরাই অনেকে সমিতির
সদস্য হতেন, ফলে উভয়ের মধ্যে বিরোধের সম্ভাবনা ছিল না।
> উর, সভা,
নগরম
গ্রাম-সমিতি ছিল দ-ধরনের ; যথা—উর এবং সভা। তা ছাড়া,
শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখার জন্য
‘নগরম’ নামক এক ধরনের সমিতি ছিল। কর্মসূচি রূপায়ণে গ্রামসভাগুলির পূর্ণ স্বাধীনতা
ছিল।
> নির্বাচন-পদ্ধতি
স্থানীয় সমিতিগুলির মধ্যে ওপরে গঠনতন্ত্র ছিল সহজ।
সাধারণভাবে | গ্রামের করদাতাদের নিয়ে ‘উর’ গঠিত হত। প্রয়োজন অনুসারে ঊর এককভাবে বা
সভার সাথে। যৌথভাবে কাজ পরিচালনা করত। রাজারা তাদের দানের দ্বারা বহু মণ্ডল সৃষ্টি
করেছিলেন। সভার গঠনপ্রণালী ছিল অনেক বেশি জটিল। বিভিন্ন গ্রামের কুড়ুম্ব’ বা পাড়া
থেকে প্রথমে যোগ্য। ব্যক্তিদের মনোনীত করা হত। আর্থিক সংগতি, বৈদিক জ্ঞান, চারিত্রিক
শুদ্ধতা এবং বয়স প্রভৃতি। যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হত। এইভাবে প্রতি কুডুম্ব
থেকে মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্য
থেকে লটারির মাধ্যমে একজনকে
মনোনীত করা হত। একটি লেখ থেকে জানা যায়, এইরকম
* ৩০টি কুডুম্ব ছিল। এদের মধ্য থেকে যোগ্যতম ১২ জনকে নিয়ে সম্বৎসরিক সমিতি গঠিত হত।
অবশিষ্ট ১২ জন উদ্যান-সমিতি
এবং ৬ জন পুষ্করিণী-সমিতি গঠন করতেন। এঁদের কার্যকালের মেয়াদ ছিল এক বৎসর। এঁরা কোনোপারিশ্রমিক
পেতেন না। ঢােল বাজিয়ে মহাসভার অধিবেশন আহ্বান করা হত। সাধারণত মন্দির-প্রাঙ্গণে এই
সভা বসত। প্রতিটি নাড়ুর একটি করে নিজস্ব সভা | ছিল। এদের বলা হত ‘নাত্তার।
আলোচনা-পদ্ধতি
উল্লিখিত সভাগুলির কর্মপদ্ধতির বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া
যায় না। অনুমান করা যায়, প্রতিটি বিষয় সাধারণভাবে আলোচিত হত। আলোচনাকালে বাদী-বিবাদী
উভয়েই উপস্থিত থাকত। অনেক সময় বিভিন্ন গ্রাম-সমিতিসমূহের যৌথ অধিবেশন বসত। সম্ভবত
তখন আলোচনার | পরে ভােটগ্রহণের রীতি ছিল না।
মধ্যস্থ, করণত্তার
চোলযুগে গ্রামীণ শাসনব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট দুজন
সরকারি কর্মচারীর | উল্লেখ পাওয়া যায়। এঁরা হলেন ‘মধ্যস্থ’ এবং করণত্তার। মধ্যস্থ
সম্ভবত গ্রাম-সভার অধিবেশনে | | পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকতেন। তবে তারা আলোচনায়
অংশ নিতেন না। করণত্তার ছিলেন
হিসাব-পরীক্ষক। সম্ভবত ভূমি-রাজস্বের
বিষয়েও এঁরা নজর রাখতেন। এঁদের পারিশ্রমিক সভা | | কর্তৃক নির্ধারিত করা হত।
> ব্যাসাম-এর অভিমত :
ঐতিহাসিক ব্যাসাম-এর মতে, স্থানীয় লোকেরাই প্রাধান্য
পেত। | বত্তিহীন বা নারীদের এখানে কোনোভূমিকা ছিল না। যেহেতু সম্পত্তিহীন ব্যক্তি নির্বাচনে
অংশ | নিতে পারত না, তাই দরিদ্র লোকেরা স্থানীয় শাসন থেকে কোনোসুযোগসুবিধা পেত না।
প্রশ্নঃ - চোলদের সামুদ্রিক কার্যকলাপ সম্পর্কে কি জান ?
উত্তর
খ্রীষ্টীয়
দশম শতকে দক্ষিণ-ভারতীয় রাজ্যগুলির মধ্যে চোল-রাজ্য ছিল বিশেষ শক্তিশালী। চোল-রাজাদের
উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব ছিল সামুদ্রিক ক্ষেত্রে প্রাধান্যলাভ। চোলদের সামুদ্রিক কার্যকলাপের
সূচনা করেন চোলরাজ প্রথম রাজরাজ৷ পরবর্তী কালে প্রথম রাজেন্দ্র চোলের নেতৃত্বে এদের
সামুদ্রিক ক্রিয়াকলাপ আরও বিস্তৃত হয়।
> উদ্দেশ্য
তবে চোলদের সামুদ্রিক কার্যকলাপের উদ্দেশ্য কি ছিল—এ
প্রসঙ্গে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। অনেকের মতে, চোলদের সামুদ্রিক কার্যকলাপের প্রধান
উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসাবাণিজ্য বৃদ্ধি করা। আবার কেউ কেউ মনে করেন, সুপরিকল্পিত কোন কর্মসূচী
অনুযায়ী চোলেরা সামুদ্রিক কাজ চালায়নি। এ কথা সত্য যে, সামুদ্রিক প্রাধান্যলাভের
ফলে চোল রাজ্যের বাণিজ্য বিস্তৃত হয়েছিল। তামিল ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ-ভারতে বণিক-সংঘ
গড়ে তুলেছিলেন এবং এর সদস্যরা বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীন দেশে
গমন করেছিলেন। চীনদেশীয় তথ্য থেকেও প্রমাণিত হয়েছে যে, চোল-রাজ্যের সাথে চীনে বাণিজ্য
বিনিময় চলত। তবে সব সময়েই যে ব্যবসাবাণিজ্য প্রসারে চোলদের সামুদ্রিক ক্রিয়াকলাপ
সীমাবদ্ধ থাকত তাও বলা চলে
। কেম্বুজি ঐতিহাসিকদের বিবরণ
থেকে জানা যায়, চোলরাজ প্রথম রাজরাজ মালয় উপদ্বীপ আক্রমণ করে সেখানকার বাণিজ্যকেন্দ্রগুলি
ধ্বংস করেছিলেন। | চোলদের সামুদ্রিক অভিযানের সূচনা করেন প্রথম রাজরাজ (৯৮৫-১০১৪ খ্রিঃ)।
তিনি উন্মুক্ত সমুদ্রে অবস্থিত ইলম জয় করেছিলেন। তিরুবালাঙ্গুরু তাম্রপটে’ দাবি করা
হয়েছে যে তিনি সিংহল (ইলমন্ডল) দখল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর দখল করা অঞ্চলের নাম
দেন ‘মুমুণ্ডি-চোলমণ্ডলম। অতঃপর রাজরাজ সিংহলের রাজধানী অনুরাধপুর ধ্বংস করেন এবং পােলন্নরূবতে
সিংহলের চোল রাজ্যের নতুন রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে তিনি একটি পাথরের শিবমন্দির
নির্মাণ করেছিলেন, যা আজও বর্তমান। চোল নৌবাহিনী সিংহলের ব্যস্তবন্দর ‘মহাতিটধ দখল
করে তার নতুন নাম দেয় ‘রাজরাজপুর। রাজরাজের শেষ নৌ-অভিযান ছিল ভারত মহাসাগরের ‘মালদ্বীপপুঞ্জের
বিরুদ্ধে। রােমিলা থাপারের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যে আরবদের কর্তৃত্ব শিথিল
করার জন্যই রাজরাজ কালদ্বীপ পুঞ্জের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিলেন।
> প্রথম রাজেন্দ্র
রাজরাজের পুত্র রাজেন্দ্ৰচোলের আমলেও (১০১৪-১০৪৪
খ্রিঃ) সামুদ্রিক অভিযান অব্যাহত ছিল। তিনিও সিংহল অভিযান করে প্রচুর ধন সম্পদ সংগ্রহ
করে এনেছিলেন। তবে সিংহলের উপর চোলদের কর্তৃত্ব স্থায়ী হয়নি। সিংহল রাজ পঞ্চম মহেন্দ্রর
পুত্র কাশ্যপ অল্পকালের মধ্যে সিংহলের দক্ষিণ ভাগ পুনর্দখল করতে পেরেছিলেন। রাজেন্দ্ৰচোলের
নেতৃত্বে চোল সেনা বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম উপকূল ধরে গঙ্গানদীর মােহনা পর্যন্ত অগ্রসর
হয়েছিল এবং গঙ্গার পবিত্র জল নিয়ে চোলরাজ্যে ফিরে গিয়েছিল। এই কারণে তিনি গঙ্গইকোন্ড
চোলপুরম বা গঙ্গা বিজেতা চোল নামে অভিহিত হতেন। শ্রীবিজয় রাজ্যের বিরুদ্ধেও তিনি সফল
হন।
রাজরাজা
চোলরাজ বীর রাজেন্দ্রের সময়েও অনুরূপ কাজ করা হয়েছিল।
এই ধরনের বিধ্বংসী ক্রিয়াকলাপের ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে এদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হওয়ার পরিবর্তে হ্রাস পেয়েছিল।
চোলদের সামুদ্রিক কার্যকলাপের
উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন সামদ্রিক প্রাধান্যলাভ করার ফলে। চোল সামরিক বাহিনী পরিপূর্ণতা
লাভ করেছিল। প্রাচীন ভারতীয় নপতিদের অদূরদর্শিতার পালন চোল-রাজারা জলপথের গুরুত্ব
ও প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। বলীয়ান ‘শ্রীবিজয়’ (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার
শৈলেন্দ্র রাজ্য) আক্রমণ করে সেখানে চোল আধপত্য স্থাপন, চোল সামুদ্রিক প্রাধান্যের
শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। এই সামুদ্রিক প্রাধান্যের জন্যই সেই সময়ে বঙ্গোপসাগরকে ‘চোল হ্রদ'
(Chola Lake) নামে অভিহিত করা হত।
***আরবরা কত খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু অধিকার করে? এই অভিযানে নেতৃত্ব কে
দিয়েছিল এবং কে পরাজিত হয়েছিল? আরবদের সিন্ধু আক্রমণ সম্বন্ধে
বর্ণনা কর।****
উত্তর
আরবরা ৭১২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু অধিকার করেছিল। এই
অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিল মহম্মদ-বিন্ কাশিম এবং পরাজিত হয়েছিল সিন্ধের রাজা দাহির।
> উত্তর-ভারত
আরবদের সিন্ধু আক্রমণের প্রাক্কালে
উত্তর ও দক্ষিণ-ভারতে একাধিক ক্ষুদ্র ও অসংহত রাজ্য গড়ে উঠেছিল। অষ্টম শতকের মাঝামাঝি
সময়ে হিমালয়ের পাদদেশে বৃহৎ রাজ্য বলতে ছিল আফগানিস্তান, নেপাল ও কাশ্মীর। এদের মধ্যে
কাশ্মীর রাজ্য ললিতাদিত্যের রাজত্বকালে (৭২২-৫৫ খ্রিঃ) যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।
প্রায় একই সময়ে যশােধর্মনের নেতৃত্বে কনৌজও রাজনৈতিক প্রতিপত্তি ও সামরিক শক্তিতে
যথেষ্ট বলীয়ান হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশে শশাঙ্কের মৃত্যুর পরও পূর্বের ‘মাৎস্যন্যায়’
(অরাজকতা) অব্যাহত ছিল। পরে পালবংশের নেতৃত্বে ঐ অঞ্চলে কিছুটা সংহতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
উত্তর-পূর্ব ভারতের কামরূপ রাজ্য ছিল খুবই দুর্বল ও গুরুত্বহীন। | উত্তর-পশ্চিমে সিন্ধুরাজ্য
ছিল দাহির নামক জনৈক রাজার শাসনাধীন।
> দক্ষিণ-ভারত
উত্তর-ভারতের মতো দক্ষিণ-ভারতেও একাধিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র
রাজ্যের উত্থান ঘটেছিল। এদের মধ্যে চোল, চের, পাণ্ড্য, পল্লব, রাষ্ট্রকূট, চালুক্য
প্রভৃতি রাজ্য ছিল উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যেও কোন উদ্ভব ছিল না এবং পারস্পরিক সংঘাত
ছিল নিত্যকার ঘটনা। | এইভাবে দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা ও আঞ্চলিক
সংকীর্ণতাবাদের প্রাবল্যের অনিবার্য ফলস্বরূপ ভারতে কেন্দ্রীয় শক্তি বলে কিছুই ছিল
না। এইরূপ বিচ্ছিন্নতার মুহূর্তে আরবদেশ সিন্ধু আক্রমণ করে খুব সহজেই কর্তৃত্বস্থাপনে
সক্ষম হয়।
> আক্রমণের
উদ্দেশ্য
আরবদেশ সিন্ধু আক্রমণের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে
ঐতিহাসিকেরা একাধিক তত্ত্বের অবতারণা করেছেন। এ. এল. শ্রীবাস্তবের মতে, আরবদের সিন্ধু-আক্রমণের
প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইসলামধর্মের বিস্তার। আবার ঐতিহাসিক আর্নল্ড (Arnold) প্রমুখের
মতে, ভারতের সম্পদ লুণ্ঠন করাই ছিল আরব-আক্রমণের প্রধান উদ্দেশ্য। পরে ভারতে তারা রাজ্যস্থাপনে
উদ্যোগী হয়।
> প্রত্যক্ষ কারণ
যাই হোক, অষ্টম শতকের প্রারম্ভে
একটি সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিন্ধুর বিরুদ্ধে আরবদের আক্রমণ ঘটে। সিংহলের রাজা
পারস্যের শাসনকর্তা হজ্জাজের কাছে উপঢৌকনস্বরূপ কিছু দ্রব্য ও রমণী একটি জাহাজে প্রেরণ
করেছিলেন। কিন্তু সিন্ধুদেশের ‘দেবল বন্দরে জাহাজটি জলদস্যুদের দ্বারা লুণ্ঠিত হয়।
ফলে হজ্জাজ সিন্ধুরাজের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কিন্তু দাহির তা দিতে অস্বীকার করলে
ক্ষুব্ধ হজ্জাজ সিন্ধু আক্রমণ করেন।
প্রথমে ‘ওবেদুল্লা’ পরে বুদাইল’
নামক দুই সেনাপতির নেতৃত্বে প্রােরত আরবদের দুই আভযান
র্থ হয়। অতঃপর মহম্মদ-বি-কাশিমের
নেতৃত্বে তৃতীয় অভিযান প্রেরিত হয় (৭১২ খ্রিঃ), | কাশিম বিনা বাধায় ‘দেবল’ বন্দর
দখল করে বহু সিন্ধুবাসীকে হত্যা করেন। অতঃপর আবহ নিপুণ’ ও ‘সেওয়ান’ দখল করে। এই সময়ে
রাজা দাহিরের অযোগ্যতা ও আরবদের মিত্রতা ব্যবহারের ফলে বহু দেশীয় সামন্ত ও সাধারণ
মানুষ আরবদের পক্ষ অবলম্বন করে। ইতিমধ্যে দাহির ‘রাওর’ দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
আরববাহিনী রাওর আক্রমণ করলে দাহির যুদ্ধ শুক করেন এবং নিহত হন। অতঃপর তার পুত্র জয়সিংহ
বিক্রমের সাথে আরবদের আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকেন। কিন্তু তিনিও পরাজিত হয়ে রাওর ত্যাগ
করে পলায়ন করেন। এরপর কাশিম ‘ব্রাহ্মণাবাদ’ ও ‘মুলতান’ দখল করে বিজিত অঞ্চলে শাসন
প্রবর্তন করেন।
আরব আক্রমণের
ফলাফল
উত্তর ও ভারতের সিন্ধু প্রদেশ
দখল করে আরবরা ইসলামিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে। | অবশ্য প্রচলিত কিছু ব্যবস্থা তারা
গ্রহণ করে।
> আরব শাসনব্যবস্থা
আরব শাসনাধীনে সিন্ধুদেশকে
কয়েকটি জেলা বা ইকতায় বিভক্ত। করা হয়। প্রতি জেলায় একজন করে আরবীয় শাসক নিযুক্ত
ছিলেন। স্থানীয় শাসনভার সিন্ধুবাসীদের হাতেই ন্যস্ত ছিল। সরকারি কর্মচারী ও সৈন্যগণ
নগদ অর্থের পরিবর্তে জায়গির ভাগ করত। হিন্দু শাসনকালের বহু আইন আরব-শাসনকালেও প্রচলিত
ছিল। রাজস্ব নির্ধারণে কোরানের নির্দেশ পালিত হত। ভূমিকর ও অ-মুসলমানদের কাছ থেকে আদায়ীকৃত
‘জিজিয়া কর ছিল রাজস্বের প্রধান উৎস। বিচারকার্য পরিচালনা করতেন বিভিন্ন স্তরের প্রশাসকরা।
তবে বড় বড় শহরে কাজী বিচার করতেন। ঐ সময়ে অন্য ধর্মাবলম্বী বহু ব্যক্তি ইসলামধর্ম
অবলম্বন করলেও তখন ধর্মপালনের যথেষ্ট স্বাধীনতা ছিল। অ-মুসলমান নাগরিকদের নানাপ্রকার
বােঝা বহন করতে হত। বহিরাগত মুসলমানদের তিনদিন ভরণপোষণ, জিজিয়া কর প্রদান ইত্যাদি
তাদের মেনে নিতে হয়েছিল। বিচারের ক্ষেত্রেও মুসলিম আইন অনুসৃত হত।
Download PDF File
File Name: 2nd Semester History Suggestions ( CU under CBCS )
File Format : PDF
File Size :
Download Link : Click Here
For Download this File
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবেশ বিদ্যা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যিক বিষয় । সেই প্রাথমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক , উচ্চিমাধ্যমিক , স্নাতক , স্নাতকত্তর এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা যেমন WBCS , PSC , SSC , UPSC , WBP , Primary TET , SET , NET প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিবেশ বিদ্যা একটি অতি গুরুত্ব পূর্ন বিষয় ।
তাই এই সবের কথা মাথায় রেখে আমরা বাংলার শিক্ষা e-Portal এর সাহায্যে সমস্ত শিক্ষার্থী দের কাছে এই সমস্ত বিষয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ও সকল বিষয়ে Online Exam Practice এর ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো ।
এখানে মাধ্যমিকের , মাধ্যমিক বাংলা , মাধ্যমিক ইংরেজী , মাধ্যমিক গণিত , মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ও পরিবেশ , মাধ্যমিক ভৌত বিজ্ঞান ও পরিবেশ , মাধ্যমিক ইতিহাস ও পরিবেশ , মাধ্যমিক ভূগোল ও পরিবেশ , উচ্চ-মাধ্যমিক এর ( একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেনীর ) বাংলা , ইংরেজী , ভূগোল , শিক্ষা-বিজ্ঞান , দর্শন , রাষ্ট্র বিজ্ঞান , পরিবেশ পরিচয় , পুষ্টি বিজ্ঞান , সংস্কৃত , ইতিহাস , , স্নাতক ( জেনারেল ) কম্পালসারি বাংলা , কম্পালসারি ইংরেজী , কম্পালসারি পরিবেশ , বাংলা ( সাধারন ) , শিক্ষা বিজ্ঞান , দর্শন , ইতিহাস , ভূগোল , সমাজবিদ্যা , Physical Education , প্রভৃতির সমস্ত বিষয়ের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন , সালের প্রশ্ন ও তার যথাযথ উত্তরসহ , এবং Online পরীক্ষা অভ্যাসের সুযোগ থাকবে ।
Calcutta University Under CBCS ( system ) , Semester (II) History General , BA 2nd Semester ( History General ) Suggestions .
No comments