BA Semester 5 (CBCS System ) Bengali Suggestions
1) সজারুর কাঁটা গল্পের লেখক / লেখিকা কে ? এইগল্পের খলনায়ক কে ?
উঃ শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় , প্রবাল গুপ্ত ।
2) দেবাশীষ এর স্ত্রীর নাম কি ?
উঃ। দীপা
3) সজারুর কাঁটার আঘাতে কজনের মৃত্যু হয় ?
উঃ তিন জনের।
4) তিনটি মানুষ বেঘোরে প্রাণ দিলো -তিনটি মানুষের নাম কি ?
উঃ ভিখারি ফাগুরাম , মুটে মঙ্গলরাম। এবং দোকানদার গুনময় দাস ।
5) প্রফেসর শঙ্কুর চরিত্রের স্রষ্টা কে ?
উঃ। সত্যজিৎ রায় ।
6) ব্যম্যাত্রীর ডায়েরি গল্পটি প্রথম কবে কোথায় প্রকাশিত হয়েছিল ?
উঃ1961(১৩৬৮ বঙ্গাব্দ) সালে অশ্বিন-কার্তিক - অঘ্রায়ন সংখ্যায় "সন্দেশ"পত্রিকায় ।
7) প্রোফেসর শঙ্কুর পোষা বিড়ালটির নাম কি ?
উঃ নিউটন ।
8) ব্যম্যাত্রীর ডায়েরি গল্পে বিধুশেখর কে ?
উঃ প্রফেসর শঙ্কুর তৈরি করা যান্ত্রিক রোবোট ।
9) প্রফেসর শঙ্কু ও গোলক রহস্য গল্পে গোলক টি আসলে কি ? গোলকটি কে কোথা থেকে পেয়েছিলো ?
উঃ গোলকটি প্রকৃত পক্ষে সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম গ্রহ 'টেরাটাম' ।
প্রোফেসর শঙ্কুর দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী অবিনাশ বাবু উশরী নদীর তীরে বেড়াতে গিয়ে বালির উপর থেকে গোলকটি কুড়িয়ে পেয়েছিলেন ।
10) হিপনিজম কি ?
উঃ হিপনিজম কথাটি এসেছে হিপটনিজম শব্দ থেকে জার অর্থ সম্মোহন বা মহোছন্ন করা ।
11) হুজ হু কি ?
উঃ হুজ হু একটি জার্মান পত্রিকা ।
12) ক্র্যাগের আবিষ্কৃত হিপনিজম কি ছিল ?
উঃ এক ধরণের বাষ্পীয় পদার্থ বা গ্যাস জা মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে সে হিপনোটাইজ হয়ে যাবে
13) শঙ্কুর একটি আবিষ্কার এর নাম লেখো ?
উঃ অনাইহিলিন গান , ফিসপিল ,
14) মহাকাশের দূত গল্পের পটভূমি কোথাকার । এই গল্পে কে কে গিয়েছিল মহাকাশের দূতের সঙ্গে দেখা করতে ?
উঃ মহাকাশের দূত গল্পের পটভূমি মিশরে ।
প্রফেসর শঙ্কু , বিজ্ঞানি ফিল্ডিং , বৈজ্ঞানিক ক্রল এবং থার্নিক্রফটি ।
শজারুর কাঁটা’ কাহিনির নামকরণ কতখানি সার্থক আলোচনা করো।
উত্তর।
বাঙালি পাঠকের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্টি ব্যোমকেশ বক্সী গোয়েন্দা সিরিজের কাহিনিগুলি। গোয়েন্দা সাহিত্যকে অনেকে প্রথম শ্রেণির সাহিত্যের সঙ্গে এক পংক্তিতে না বসালেও জনপ্রিয়তাকে অস্বীকার করতেও পারেননি। শিশু থেকে কিশোর, যুবক থেকে বৃদ্ধ সকলেই এই সাহিত্য ধারাকে গ্রহণ করেছেন আত্মার আত্মীয় হিসাবে। আর্থার কোনান ডয়েল বা আগাথা ক্রিস্টির মতো শরদিন্দুর ব্যোমকেশ বাঙালি পাঠকের কাছে সমান আদরণীয়। ব্যোমকেশকে নিয়ে লেখা কাহিনিগুলির মধ্যে ‘শজারুর কাঁটা’ জনপ্রিয়তার উচ্চ শিখরে প্রতিষ্ঠিত। চলচ্চিত্রায়িত হওয়ার সুবাদে এর কাহিনির সঙ্গে পরিচিত অনেকটাই এখন বিচার্য এই কাহিনিটির নামকরণ কতদূরে সার্থক।
ঘটনা, বিষয়বস্তু, চরিত্র, ব্যঞ্জনা ইত্যাদি নানা বিষয়কে সাহিত্যিকরা নামকরণের সময় প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। নামকরণ বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন হওয়ায় এর প্রতি বাড়তি নজর রাখতে হয় লেখকদের। পাঠকও নামকরণের মধ্যে দিয়েই কাহিনির আভাস পেয়ে থাকেন। ফলে নাকমরণকে সার্থক করে তুলতে কোনো খামতিই রাখতে চান না লেখককূল। আলোচ্য উপন্যাসের নামকরণে স্থান পেয়েছে ‘শজারুর কাঁটা’ নামক একটি বস্তু। কাহিনির অগ্রগতি থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত শজারুর কাঁটাই যে হয়ে
উঠেছে উপন্যাসের প্রাণকেন্দ্র তা আমরা কাহিনি বর্ণনায় তুলে ধরবো। আক্ষ্যে উপন্যাসের মূল কাহিনির সঙ্গে সম্পৃক্ত ‘উপক্রম’ এবং ‘অনুক্রম' অংশ দুটির মধ্যেও আছে শজারুর কাঁটা প্ৰসঙ্গ। ফলত নামকরণের সার্থকতা নিয়ে আমাদের মনে কোনোরূপ দ্বন্দ্ব বা সংশয় কাজ করে না। ‘শজারুর কাঁটা’ উপন্যাসের কাহিনি প্রকৃতপক্ষে একজন মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ী দেবাশিস এবং বনেদী রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে দীপার জীবন কথা। ঘটনাচক্রে উভয়ের বিবাহ হয় এবং এই বিবাহকে কেন্দ্র করেই দেবাশিসের প্রাণহানির সম্ভাবনা দেখা দেয়। ঘটনাটি এরকম দীপা রক্ষণশীল পরিবারের কন্যা। শিক্ষিতা হলেও তার স্বাধীনতা প্রায় ছিলই না। সদ্য তরুণী দীপা বাড়ি থেকে বেরোতে না পারলেও বাড়িতে আসা দাদার গায়ক বন্ধু প্রবালের প্রতি প্রণয়াসক্ত হয়। কিন্তু রক্ষণশীলতার বেড়া জালে বন্দী দীপার পরিবার এই সম্পর্ক মেনে না নিয়ে তাকে দ্রুত পাত্রস্থ করে নিকটবর্তী সুপাত্র দেবাশিসের সঙ্গে। নিপাট, শান্ত, ভদ্র দেবাশিসের বাড়িতে ভৃত্য নকুল ছাড়া আর কেউ না থাকায় দীপারও একটু সুবিধা হয়। সে দেবাশিসকে তার পূর্ব প্রণয়ের কথা জানিয়ে তার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে অস্বীকৃত হয় এবং গোপনে টেলিফোন মারফৎ পূর্ব প্রণয়ীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যায়। দেবাশিস তাকে মুক্তি দিতে চাইলেও পারিবারিক অমার্যাদা, সামাজিক অপবাদের ভয়ে সে বাড়ি ফিরতে চায়নি। অগত্যা একই বাড়িতে থেকে তারা স্বামী-স্ত্রীর মিথ্যা অভিনয় করে চলে। বিপত্নীক প্রবাল আর্থিক থেকে দুর্বল এবং ঘৃণ্য মানসিকতার ব্যক্তি ছিল। প্রেমিকা এবং সম্পত্তি হাত ছাড়া হয়ে যাওয়ার জন্য তার ঈর্ষা, ক্রোধের জন্ম হল এবং সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো একদা তার সহপাঠী, আর্থিক ভাবে সচ্ছল, বর্তমান দীপার স্বামী দেবাশিসের উপর মনে মনে পরিকল্পনা করলো আত্মীয় পরিজনহীন দেবাশিসকে হত্যা করতে পারলে তার পরিকল্পনা সফল হবে। দেবাশিসের সম্পত্তি এবং দীপা উভয়ই তার করায়ত্ত হবে। একথা ভেবে কুটিল বুদ্ধির অধিকারী প্রবাল নিজেদের উপর থেকে সন্দেহ দূর করার জন্য একটি ঘৃণ্য কৌশল গ্রহণ করলো। সাধারণ লোক এবং পুলিশের তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার লক্ষে সে তিনজন নিরীহ নিরপরাধ ব্যক্তিকে শজারুর কাঁটাকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে নির্দ্বিধায় হত্যা করলো। রাস্তার ভিখিরি ফাগুরাম, মুটে মঙ্গলরাম এবং মনিহারী দোকানের মালিক গুণময় দাসকে হত্যা করার পর প্রবাল তার মূল লক্ষ্য দেবাশিসের নজর দিল। উপন্যাসের ‘উপক্রম’ অংশে আমরা উক্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর জানতে পারি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আততায়ীর অস্ত্র ছিল ‘শজারুর কাঁটা’।
অসহায় তিনটি মানুষকে হত্যার পর প্রবাল সুকৌশলে দেবাশিসকে তার নিশানায় এনে ফেলে। রাত্রের অন্ধকারে অতর্কিত আক্রমণে পিছন দিক থেকে তার পিঠে কাঁটা বিঁধিয়ে দেয়। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে প্রবালের উদ্দেশ্য সফল হয় না। প্রকৃতির আশ্চর্য নিয়মে দেবাশিসের হৃদপিণ্ড ডানদিকে অবস্থিত হওয়ায় প্রবালের বিধানো কাঁটা দেবাশিসকে আহত করে, মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে না। দেবাশিসের হৃদপিণ্ড বদলের ব্যাপারটি দীপা আগে থেকেও জানলেও কখনো প্রবালকে বলেনি। বরং দেবাশিসের প্রতি তার তৈরি হওয়া শ্রদ্ধা প্রবালের কুকীর্তি জানবার পর ভালোবাসায় পরিণত হয়। জীবনের সংকটময় সময়ের তার মধ্যে প্রকৃত বোধের জন্ম নেয়। মিলন হয় দেবাশিস দ্বীপার। এই মিলনের পরোক্ষ ভূমিও শজারুর কাঁটা। শজারুর কাঁটায় বিদ্ধ হওয়ার সুবাদেই তো দীপা আর একটু তাড়াতাড়ি তার কাছাকাছি আসতে পারলো। সুতরাং মূল কাহিনির নিয়ন্ত্রক শজারুর কাঁটা।
উপন্যাসের ‘অনুক্রম’ অংশে দেখি শজারুর কাঁটার রহস্য উন্মোচন করতে এবং আততায়ীকে ধরতে পুলিশ ইন্সপেক্টর রাখালবাবু এবং সত্যান্বেষী ব্যোমকেশের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে প্রবাল শজারুর কাঁটা বিধিয়ে স্বয়ং ব্যোমকেশকেই হত্যা করতে উদ্যত হয়। কিন্তু এক্ষেত্রেও প্রবাল ব্যর্থ হল বুলেট প্রুফ জ্যাকেটের জন্য, উল্টে ব্যোমকেশের করাঘাত এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়ার মধ্য দিয়ে কাহিনির পরিসমাপ্তি ঘটে ।
১। হিপনোজেন শব্দের অর্থ কী? গল্পে হিপনোটাইজড কেউ হয়েছিল কিনা কাহিনি। অবলম্বনে বিবৃত করো।
উত্তর।
বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক এবং গেয়েন্দা কল্পবিজ্ঞান কাহিনির লেখক সত্যজিৎ রায়ের কল্পবিজ্ঞান শ্রেণির একটি গল্প ‘হিপনোজেম'। সাধারণ ভাবে হিপনোটিজম শব্দের অর্থ সম্মোহন বা . মোহাচ্ছন্ন। কৃত্রিম উপায় কাউকে সম্মোহিত করা বা মোহাচ্ছন্ন করার অর্থ হিপনোটাইজ। আলোচ্য গল্পে ‘হিপনোজেন’ হল একটি বাষ্পীয় পদার্থ। যা প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করিয়ে তাকে সম্মোহিত করে রাখার জন্য আবিষ্কার করেছিলেন বিজ্ঞানী ভিলেন আলেকজাণ্ডার ক্রাগ।
১৩৩৮ বঙ্গাব্দের ‘সন্দেশ’ পত্রিকার বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় সংখ্যায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল ‘হিপনোজেন’ গল্পটি নরওয়ে থেকে আলেকজান্ডার ক্লাগ নামে এক অপরিচিত ব্যক্তি প্রোফেসর শঙ্কুকে ‘লাভজনক’ কিছু দেখানো এবং বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কয়েকজন বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমন্ত্রণ পত্র ও প্লেনের টিকিট পাঠিয়ে দেন। পত্র পাওয়ার পর পুরোনো জার্মান পত্রিকা দেখে শঙ্কু ব্রাজিলের এক হীরের খনি মালিকের নাম জানতে পেরেছিলেন, কিন্তু সেখানে তাঁর মৃত্যু সালের উল্লেখ ছিল। শঙ্কুকে আমন্ত্রণ জানানো অপরিচিত ভদ্রলোকের রহস্যময়তা জানার জন্যই তিনি নরওয়ে যাওয়া মনস্থ করলেন— “মন বলছে আমার নরওয়ে সফর মাঠে মারা যাবে না।” নরওয়ে পৌঁছানোর পর ইংল্যান্ডের পদার্থ বিজ্ঞানী তথা শঙ্কুর বন্ধু ড. সামারভিল এবং গ্রিসের বায়োকেমিস্ট হেক্টর পাপাডোপুলসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় শঙ্কুর। তাঁরা ক্রাগের পাঠানো গাড়ি করে রাজপুরীর মতো বাড়িতে প্রবেশ করেন। মধ্যযুগীয় কেল্লার ঢংতে তৈরি বাড়িটিকে সাতশো আটশো বছরের পুরোনো বলে মনে হলেও আসলে চল্লিশটি ঘর বিশিষ্ট দুর্গ বাড়িটি বিংশ শতকে তৈরি। ক্রাগের ড্রইং রুম বা ওয়েটিং রুমে থাকা রহুমূল্য অয়েল পেন্টিং অস্ত্রশাস্ত্র লোহার বর্ম শঙ্কু সহ উপস্থিত বৈজ্ঞানিকদের অবাক করে দিয়েছিল—“তার চোখ ধাঁধানো বাহার দেখে আমাদের তিনজনেরই কিছুক্ষণের জন্য কথা বন্ধ হয়ে গেল।...সারা দুর্গের ঘরময় আরও কত কী ছাড়িয়ে আছে কে জানে।”
এরপর তাঁরা ক্রাগের ঘরে গিয়ে তাঁকে দেখতে পেলেন—“তুলোর বালিশে পিঠ দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় যিনি আমাদের দিকে রোগক্লিষ্ট অথচ আশ্চর্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন, তিনিই যে এই কেল্লার অধিপতি শ্রী আলেকজান্ডার ক্লাগ, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।” শঙ্কুরা বুঝতে পারলেন ভদ্রলোক অত্যন্ত অসুস্থ প্রায় মৃত্যু মুখে পতিত। ঘরে তারা যন্ত্রমানব ভৃত্য ওডিন এবং পুনর্জীবিত চাকর নীলসকে দেখতে পেলেন। আলেকজাণ্ডার ক্রাগ শঙ্কুদের সামনে নিজের পরিচয় দান করে জানালেন তাঁর বয়স দেড়শো বছর। তিন তিনবার নিজের মৃত্যুকে ঠেকিয়ে আয়ু বৃদ্ধি করে নিলেও এবার আর বাঁচার উপায় নেই। কিন্তু তিনি একটি চার্ট তৈরি করে রেখেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর সেই চার্ট অনুযায়ী শঙ্কুদের মতো বৈজ্ঞানিকরা ওষুধ প্রয়োগ করে তাঁকে পুনর্জীবন দান করতে পারেন। এজন্যই তাঁদের এখানে নিয়ে আসা। একথা বললেও তিনি নিজের ‘অন্তিম অ্যাডভেঞ্চার টি আসলে কী তা শঙ্কুদের জানাননি।
ক্রাগের সঙ্গে কথোপকথনের পর শঙ্কু সামারভিল এবং পাশাডোপুলস নিজেদের ঘরে ফিরে এসে বুঝতে পারলেন তাঁরা বড়ো খপ্পড়ে পড়েছেন এবং সহজে এখান থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব—“কাল কপালে কী আছে কে জানে।..এই বন্দি দশা থেকে আমাদের মুক্তি হবে কবে?” ইতিমধ্যে ক্রাগের মৃত্যু হয় এবং তারা ঘরের ভিতরে থাকা স্পিকারের মাধ্যমে তা শুনতে পান। সে রাত্রে তারা ফ্রাগের নিষিদ্ধ ঘর পরিদর্শন করেন এবং ক্রাগের কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করার সময় জানতে পারেন ‘হিপনোজেন’-এর কথা। ক্লাগ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ব্ল্যাক পান্থার, যন্ত্রমানব সহ বেশ কিছু প্রাণী ও বস্তুকে হিপনোটাইজড করেছেন। কিন্তু তাঁর আসল উদ্দেশ্য শঙ্কুদের সাহায্যে নিজের জীবন ফিরিয়ে নিয়ে তাদের তিনজন পৃথিবীর মানুষকে হিপনোটাইজড করে অলৌকিক ক্ষমতা সম্পূর্ণ এবং শক্তিধর মানুষ হিসেবে বেঁকে থাকবেন। ক্রাগের ডায়েরিতে দেখা যায় ‘হিপনোজেন’ ওষুদের কার্যকারিতার কথা—“এই গ্যাসের একটি কণা বা মলিকিউল একজন মানুষের নিঃশ্বাসের সঙ্গে তার দেহে প্রবেশ করলে সে মানুষ চব্বিশ ঘন্টার জন্য সম্মোহিত বা হিপনোটাইজড হয়ে যাবে। লন্ডন নিউইয়র্কের মতো একটা গোটা শহরের লোককে এক বছরের জন্য হিপনোটাইজড করতে একটা বোমাই যথেষ্ট।” অবশ্য কপাল জোড়ে তারা দেরাজের ক্যাবিনেটে হিপনোজেনের প্রভাব দূর করার ওষুধ ‘এইচ মাইনাসে’র দেখাও পেল। কিন্তু তারা নিজের কাছে সেটি রাখার আগেই ওডিন ঘরে প্রবেশ করে এইচ মাইনাসের শিশিটা নিয়ে তাদের ঘর থেকে বের করে নিয়ে গেল।
থর ও ওডিনের পাহারায় ক্রাগের কথা মতো বৈজ্ঞানিক চার্ট অনুসরণ করে শঙ্কুরা কাজ শুরু করার সময় আর একটি ঘটনা অবাক করার মতো ঘটলো। হেক্টর পাপাডোপুলস যে বিজ্ঞানী নয়, তার অসুস্থ দাদার ছদ্মবেশে কোটি কোটি টাকার ধন সম্পত্তি চুরির জন্য এখানে এসেছে তা নিজ মুখে স্বীকার করে আচমকা সকলের অলক্ষে পালিয়ে গেল। শঙ্কু এবং সামারভিল বৈজ্ঞানিক চার্টের নির্দেশিকা পালন করে ফ্রাগের নির্দেশিকা পালন করে ফ্রাগের মৃতদেহের দিকে একদৃষ্টে নজর দিয়ে দেখতে পেলেন—“একটা সবুজের আভাস লক্ষ করছি ক্রাগের সারা মুখের উপর।...আমি আর সামারভিল সম্মোহিতের মতো চেয়ে আছি ক্লাগের মৃতদেহের দিকে। চামড়ার সবজু ভাবটা দ্রুত মিলিয়ে আসছে আমাদের চোখের সামনে।...তার পরমুহূর্তে ক্রাগের দেহের উপরার্ধ সটান সোজা হয়ে বসল খাটের উপর।” পুনর্জীবন লাভ করে ধন্যবাদের পরিবর্তে ক্রাগের নৃশংস চেহারা সামনে এল এবার। তিনি অন্তিম অ্যাডভেঞ্চারের কথা প্রকাশ করলেন নিজের মুখে—“থর আর ওডিনকে দিয়ে আর কোনও প্রয়োজন নেই আমার...তাদের জায়গা নেবে এখন তোমরা দুজন। যান্ত্রিক মানুষের নিজস্ব বুদ্ধি সীমিত। তোমাদের বুদ্ধি আছে। তোমরা আমার আদেশ মতো কাজ করবে। যে লোক সারা বিশ্বের মানুষের উপর কর্তৃত্ব করতে চলেছে, তারাই অনুচর হবে তোমরা।” একথা বলে ক্লাগ যখন শঙ্কু ও সামারভিলকে হিপনোটাইজ করার জন্য উদ্যত তখনই ঘরের সকলকে অবাক করে দিয়ে ব্ল্যাক প্যানথার ঝাঁপিয়ে পড়লো ক্লাগের ওপর। মুহূর্তের মধ্যে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল ব্রাগের ওপর। বাইরে থেকে পাপাডোপুলসের গলার আওয়াজ শুনে থর, ওডিন ও হেনরিকের বাধা অতিক্রম করে দুঃস্বপ্নের দুর্গা বাড়ি ত্যাগ করে তিনজনে রওনা দিলেন অসলো বিমান বন্দরে উদ্দেশ্যে। চোর হলেও পাপাডোপুলসই হয়ে উঠলেন আসল হিরো। যন্ত্রমানব থরের পকেট মেরে এইচ মাইনাসের শিশি ছিনিয়ে ব্ল্যাক প্যান্থারকে মুক্ত করে দিতেই তাদের মুক্তির পথ এবং পৃথিবী মানুষের হিপনোটাইজ হওয়ার পথ বন্ধ হয়েছিল চিরতরে। ভিলেন বিজ্ঞানীর স্বপ্নকে ব্যর্থ করে সমাজের মঙ্গল বিধানে একজন চৌর্যবৃত্তির মানুষই হয়ে উঠেছিলেন আসল হিরো। অবশ্য নিজের পেশার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা তিনি করেননি। যন্ত্রমানবদ্বয়ের চোখে ধুলো দিয়ে মৃত ক্রাগের আঙুল থেকে হীরের আংটি খুলে নিয়ে তিনি নিজের পেশার প্রতি আস্থা বজায় রেখেছিলেন। গল্প শেষে তাই দেখি ক্রাগের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে হিপনোজেন গ্যাসেরও মৃত্যু ঘটেছে। পাপাডোপুলসের সাহসিকতা, বুদ্ধিমত্তা এবং ঘৃণ্য পেশা পকেট মারির উপকারিতায় হিপনোটাইজড হওয়া থেকে সকলেই রক্ষা পেয়েছে। জগতের কল্যাণে বিজ্ঞানের জয় যাত্রাকে কালিমালিপ্ত হতে দেননি তিনি। এক রহস্য গম্ভীর পরিবেশে, কঠিন শৃঙ্খল থেকে যেভাবে পাপডোপুলস শঙ্কু-সামারভিলের মতো বিজ্ঞানীদের উদ্ধার করেছেন তাতে নিজেকে অজেয় শাস্তির অধিকারী বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক রূপে ঘোষণাকারী দাম্ভিক ক্রাগের পরাজয় সূচিত হয়েছে। ঘৃণ্য অপবিজ্ঞানীর শাসনের মুখে আর পড়তে হয়নি কাউকেই।
প্রফেসর শঙ্কুর চরিত্র আলোচনা করো
প্রোফেসর শঙ্কু একজন বিজ্ঞানী এবং স্কটিশচার্চ কলেজের অধ্যাপক। ত্রিলোকেশ্বর শঙ্ক গিরিডির স্কুল থেকে মাত্র বারো বছর বয়সে ম্যাট্রিক, চোদ্দ বছর বয়সে আই. এস. সি ও ষোল বছর বয়সে ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রিতে ডবল অনার্স নিয়ে বি. এস. সি. পাস করেন। মাত্র কুড়ি বছর বয়স থেকে তিনি অধ্যাপনা শুরু করেন। আবিষ্কারক ও গবেষক হিসাবে তিনি ৭০টির বেশি জিনিস আবিষ্কার করেছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—সর্বরোগহারী বাড়ি মিরাকিউকল, আত্মরক্ষার্থে মানুষ বিনা রক্তপাতে অদৃশ্য করে দেওয়া অ্যানাইহিলিন পিস্তল, লুপ্ত স্মৃতি ফিরিয়ে আনার ঘুমের ওষুধ রিমেমব্লেন, অল্প স্বল্প শাস্তি দেওয়ার যন্ত্র স্নাফগান, যান্ত্রিক রোবট রোবু এবং বিধুশেখর, সস্তার আলো লুমিনিম্যাক্স, অনুবাদক যন্ত্র লিঙ্গুয়া গ্রাফ, শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণের ট্যাবলেট এয়ারকন্ডিশনিং পিল, পেট ভরানোর বটিকা-ইণ্ডিকা ইত্যাদি। গিরিডির প্রসিদ্ধ তান্ত্রিক বটুকেশ্বর শঙ্কু ছিলেন তাঁর পিতামহ, পিতা ছিলেন। অপ্রতিদ্বন্দ্বী ধন্বন্তরি চিকিৎসক ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু। আইনস্টাইনের ভক্ত শঙ্কু আবিষ্কার হিসাবে নিজেকে টমাস আলভা এডিসনের পরেই স্থান দেন।
বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলির জন্য তাঁকে অনেক জায়গায় ভ্রমণ করতে হয়েছিল। স্বদেশ এবং বিদেশের জায়গায় ভ্রমণ করতে হয়েছিল। স্বদেশ এবং বিদেশের বহু বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে তাঁকে উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি সেখানে পৌঁছে যান। পূর্ব-পশ্চিম ইউরোপ, সুইডেন, নরওয়ে, জার্মানি, আফ্রিকা, বাগদাদ। সাওপাওলো, টাইম মেশিনে চেপে সম্রাট অশোকের রাজত্বকাল এমনকি মঙ্গল গ্রহেও শঙ্কুকে পদার্পণ করতে দেখা যায়। তাঁর ডায়েরিতে আশ্চর্য সব অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে গেছেন ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার নির্লোভ প্রকৃতির সৎ, আত্মভোলা, অবিবাহিত এই বৈজ্ঞানিক। কল্পবিজ্ঞান, রহস্য-রোমঞ্চ, ভ্রমণ কাহিনি, অ্যাডভেঞ্চার। ফ্যান্টাসি সব মিলে মিশে শঙ্কুর কাহিনিগুলি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হয়ে আছে। শিশু কিশোর থেকে বয়স্ক যে কোনো পাঠক এই কাহিনি পাঠে কখনো ক্লান্তিবোধ করেন বলে মনে হয় না।
ভৃত্য প্রহ্লাদ, ‘বেড়াল নিউটন, তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী, ইংলণ্ডের জেরেমি সণ্ডার্স, জার্মানির উইল হেলম ক্লোল, গিরিডির অবিনাশ চন্দ্র মজুমদার, মাকড়দহের নকুড়চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ তার হিতকারী, বন্ধু স্থানীয়। অন্যদিকে সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানী হামবোল্ট ইতালির বিজ্ঞানী রঙি, চিলিয়ান জাদুকর আগাসি প্রমুখ শঙ্কুর সঙ্গে বিভিন্ন সময় শত্রুতা করেছে। প্রতি ক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত শঙ্কু বিজয়ী হয়েছেন। নিজের ডায়েরিতে এসব ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা তিনি নিজেই লিপিবদ্ধ করে গিয়েছিলেন। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলির জন্য তিনি নানা সম্মান এবং পুরষ্কার লাভ করেছেন, যদিও আমরা জানি টাকা পয়সা বা খ্যাতির প্রতি তাঁর এতটুকু লোভ বা মোহ ছিল না। সৎ, আদর্শবাদী, আত্মভোলা-বিজ্ঞানী প্রাচীন সাহিত্য, সংস্কৃতি, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, হিপনোটিজ প্রভৃতির উপর বিশ্বাস রাখালেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদাই প্রতিবাদী। স্থির বুদ্ধির মানুষ, খর্বকায় এই বিজ্ঞানি পঁচাত্তর বয়সে প্রশান্ত মহাসাগরের কোনো এক দ্বীপে অভিমানে সেই যে বেরিয়েছিলেন, এখনও ফিরে আসেননি। কারো কারো মতে, দুর্ঘটনায় তাঁর প্রাণহানি ঘটেছে, আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন তিনি কোনো গোপন আবিষ্কারে ব্যস্ত, সময় হলে ঠিক আত্মপ্রকাশ করবেন।
No comments