Header Ads

Header ADS

History Suggestion for Third Semester of Calcutta University under CBCS System History Suggestions( BA General ) with Answer

 






ইতিহাসের প্রশ্ন 


বিজয়নগর রাজ্যের সামাজিক জীবন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। 
অথবা, বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ থেকে বিজয়নগর রাজ্যের সমাজজীবনের কী পরিচয় পাওয়া যায়?

জয়নগর রাজ্যের সমাজজীবন

সূচনা | বিজয়নগর রাজ্যের সমৃদ্ধির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বহু বিদেশি পর্যটক এখানে এসেছিলেন, যেমন— নিকোলো কন্টি, দোমিনিগো পায়েজ, ফারনাও নুনিজ, আবদুর রজ্জাক প্রমুখ। এঁদের বিবরণ থেকে বিজয়নগর রাজ্যের সমাজজীবনের যে চিত্র পাওয়া যায়, তা নীচে দেওয়া হল।

নারীদের স্থান

বিজয়নগরের সমাজে নারীজাতির বিশেষ মর্যাদা ছিল। রাজনীতি, সমাজ ও ধর্মীয় বিষয়ে নারীদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। অস্ত্রব্যবহার এবং শিল্পকলার ক্ষেত্রে নারীরা উচ্চস্থান লাভ করেছিল। এই সময় গঙ্গাদেবী, হোনাম্মা প্রমুখ শিক্ষিতা নারীর নাম জানা যায়। নুনিজের বিবরণ থেকে জানা যায় মহিলাদের মধ্য থেকে কেরানি, রক্ষী প্রভৃতি পদের মনোনয়ন করা হত। এমনকি তাঁর বিবরণে মহিলা বিচারকেরও পরিচয় মেলে। তবে সমাজের উচ্চস্তরের মধ্যে বহুবিবাহ এবং যৌতুকপ্রথার প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। এ ছাড়া সহমরণ প্রথাও প্রচলিত ছিল সেযুগে।

ব্রাহ্মণদের প্রভাব

বিজয়নগরের সমাজে ব্রাহ্মণদের বিশেষ প্রভাব ছিল। তাঁরা ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব খাটাতেন | নুনিজ ব্রাহ্মণদের মেধার তীক্ষ্ণতা, হিসাব রাখার ক্ষমতার বিবরণ দিয়েছেন । অবশ্য বিজয়নগরের রাজারা সমস্ত ধর্মের প্রতি সহিম্বুতার নীতি অনুসরণ করেছিলেন।


খাদ্যাভ্যাস

বিজয়নগর রাজ্যের জনগণ চাল, গম, ফল, শাকসবজি, দুধ, মাছ, মাংস প্রভৃতি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। তবে ব্রাহ্মণরা নিরামিষ খাবার খেতেন। সাধারণ মানুষ মাংস খেলেও গোমাংস নিষিদ্ধ ছিল। বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, বিজয়নগরের রাজাদের অধিকাংশ বৈঘ্নব হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা মাংস ভক্ষণে অনীহা প্রকাশ করেননি।

ধর্মব্যবস্থা

বিজয়নগরের রাজারা বিন্নুর উপাসক হলেও অন্যান্য ধর্মের প্রতি সহিষু ছিলেন। এর ফলে জৈন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইসলাম প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিরাপদে বসবাস করত। তবে সমাজে বিভিন্ন ধরনের কুপ্রথার প্রচলন ছিল, যেমন—বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, দেবদাসী, সতীদাহপ্রথা প্রভৃতি।




আকবর কেন দীন-ই-ইলাহি প্রবর্তন করেছিলেন?

অথবা, আকবরের ধর্মনীতি গ্রহণের পিছনে কী কী কারণ ছিল?

আকবরের দীন ই ইলাহি প্রবর্তনের কারণ

সূচনা | পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে যেসব ধর্মপ্রাণ সম্রাট ভারতবর্ষে রাজত্ব করেছিলেন তাঁদের মধ্যে সম্রাট আকবর ছিলেন অন্যতম | তিনি সমন্বয়বাদী ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে ‘দীন-ই-ইলাহি’ নামে  একটি ধর্মমত প্রবর্তন করেন। আকবরের এই উদার ধর্মনীতি গ্রহণ তথা দীন-ই-ইলাহি প্রবর্তনের পিছনে কতকগুলি কারণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল।

সমন্বয়বাদী ধর্মচিন্তার উন্মেষ

পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে সমন্বয়বাদী ধর্মচিন্তার উন্মেষ ঘটেছিল। ফলে ধর্মীয় ক্ষেত্রে নবচিন্তা ও অনুসন্ধানের ক্ষেত্র তৈরি হয়। এযুগে ভক্তিধর্মের প্রচারক, যথা—কবির, নানক, শ্রীচৈতন্য প্রমুখ এবং সুফিসন্তরা একেশ্বরবাদী ধর্মসমন্বয়ের কথা প্রচার করেন। এই ধর্মীয় প্রভাব আকবরের চিন্তাধারাকেও প্রভাবিত করেছিল।

উদার মনোভাবাপন্ন পূর্বপুরুষ

আকবরের পূর্বপুরুষরা ধর্মীয় দিক থেকে ছিলেন উদার মনোভাবাপন্ন | বাবর ও হুমায়ুনের মধ্যে ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল না। হুমায়ুন কিছুকাল পারস্যে থাকাকালে শিয়া ধর্মের প্রভাব তাঁর ওপর পড়েছিল। আকবরের মা হামিদা বানু ছিলেন শিয়া ধর্মমতে বিশ্বাসী। এই বিষয়গুলি আকবরকে প্রভাবিত করেছিল। তেমনই আকবরের শিক্ষক আবদুল লতিফ আকবরের মনে যুক্তিবাদী চিন্তাধারা ও উদার চিন্তার জাগরণ ঘটান।

বন্ধু ও সভাসদদের প্রভাব

আকবরের বন্ধু ও সভাসদদের প্রভাবও ছিল উল্লেখযোগ্য। আবুল ফজল, শেখ মুবারক, কবি ফৈজি প্রমুখ সুন্নি ধর্মের গোঁড়ামির সমালোচনা করেন।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য

ইতিহাসবিদ পার্সিভ্যাল স্পিয়ারের মতে, আকবর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়কে সিংহাসনের প্রতি অনুগত রাখার জন্য আগ্রহী ছিলেন। তিনি ধর্মীয় বিভেদ দূর করে সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক অনৈক্যের অবসান ঘটানোর জন্য নতুন ধর্মমত প্রবর্তন করেন।

রাজপুতদের প্রভাব

ইতিহাসবিদ এডওয়ার্ডড্স ও গ্যারেট মন্তব্য করেছেন যে, আকবরের ধর্ম প্রবর্তনের ক্ষেত্রে রাজপুত জাতির সাথে তাঁর বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। রাজপুতদের প্রভাবে আকবর উদার এবং পরধর্ম সহিষ্ণু হয়ে ওঠেন।

আলোকপ্রাপ্ত মানসিকতা

আকবরের ধর্মনীতি ও দীন-ই-ইলাহি প্রবর্তন ছিল আলোকপ্রাপ্ত মানসিকতার ফলশ্রুতি। আকবর সমকালীন যুগের সংকীর্ণতা ও সাম্প্রদায়িক গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে উঠে আলোকপ্রাপ্ত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে, মুঘল শাসন বিদেশি কর্মচারী ও মন্ত্রীদের ওপর নির্ভরশীল | আত্মীয় পরিজন ও কর্মচারীদের মধ্যে ষড়যন্ত্র ও স্বার্থান্বেষী মনোভাব লক্ষ করে আকবর ক্রমশ ভারতীয়দের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং বিদেশি মুঘল বংশকে ভারতীয় মুঘল বংশে পরিণত করতে যত্নবান হন। আর এইসব উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের পদ্ধতি হিসেবে আকবর দীন-ই-ইলাহি নামে নতুন ধর্মনীতি প্রচলন করেন।

উপসংহার | ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, আকবরের দীন-ই-ইলাহি প্রবর্তনের পিছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল। একদিকে যেমন আকবরের ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা এর পিছনে দায়ী ছিল, তেমনই সমকালীন সমন্বয়ী ধর্মীয় চেতনা এই ধর্মমত প্রবর্তনের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিল।


 


টীকা লেখো: আবুল ফজল।

আবুল ফজল

সূচনা | মুঘল যুগের অন্যতম সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ ছিলেন আবুল ফজল।

পরিচয়

১৫৫১ খ্রিস্টাব্দে আগ্রায় আবুল ফজল জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শেখ মুবারক ছিলেন সমকালীন যুগের অন্যতম শিক্ষাবিদ এবং মাহদভী মতাদর্শের প্রচারক। তাই পিতার কাছ থেকে আবুল ফজল সুহ-ই-কুল বা বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের আদর্শ শিক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সুপণ্ডিত, উদার ও বিচক্ষপ বাক্তি | আকবরের সাথে পরিচিত হওয়ার পর তিনি তাঁর বন্ধু ও অন্যতম সভাসদে পরিণত হন। আকবরের রাষ্ট্রচিন্তা ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে উদারনৈতিক চিন্তাধারা গ্রহণের পিছনে আবুল ফজলের অবদান ছিল অনস্বীকার্য | যোদ্ধা হিসেবেও তিনি কৃতিত্ব দেখান। আকবরের দাক্ষিণাত্য জয়ের ক্ষেত্রে সেনানায়ক হিসেবে আবুল ফজল বীরত্বের পরিচয় দেন। 

অবদান

মুঘল যুগের ইতিহাসবিদ ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক হিসেবে আবুল ফজলের অবদান চিরস্মরণীয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল আইন-ই-আকবরি ও আকবরনামা। এই দুটি গ্রন্থে আবুল ফজল যেমন বাবরের সময়কাল থেকে আকবরের রাজত্বকালের সমস্ত ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন তেমনই আইন-ই-আকবরির মধ্যে মুঘল যুগের আইন, শাসন, বিচারব্যবস্থা, অর্থনীতি প্রভৃতি দিকগুলি তুলে ধরেছেন। তাই এই গ্রন্থগুলির ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম।


উপরোক্ত গ্রন্থগুলি ছাড়াও আবুল ফজলের রোয়াকত-ই-আবুল ফজল ও ইন্‌সা-ই-আবুল ফজল গ্রন্থ দুটি ঐতিহাসিক উপাদান হিসেবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি গ্রন্থের মধ্যে সম্রাট আকবরের বিভিন্ন নির্দেশাবলি, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে পাঠানো চিঠিপত্র সংকলিত হয়েছে। আবুল ফজলের এই গ্রন্থগুলি থেকে সমকালীন আর্থসামাজিক পরিস্থিতির বিবরণ মেলে।

উপসংহার |
 আকবর আবুল ফজলকে মনসবদার পদে নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু আবুল ফজলের উন্নতিতে যুবরাজ সেলিম ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন। সেলিমের নির্দেশে গুপ্তঘাতকের দ্বারা ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে আবুল ফজল নিহত হন। এইভাবে মুঘল যুগের অন্যতম পণ্ডিত ব্যক্তির জীবনাবসান ঘটে।


>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>

মুঘল যুগের জায়গিরদারি ব্যবস্থার সংকট কীভাবে দেখা দিয়েছিল?


Ans:- 
মুঘলযুগের জায়গিরদারি ব্যবস্থার সংকট

সূচনা| মুঘল যুগে জমির একটি অংশকে 'জায়গির' বলা হত। যিনি জায়গির লাভ করতেন তাঁকে জায়গিরদার বলা হত। সাধারণভাবে মনসবদারদের নগদে বেতনের পরিবর্তে জায়গির দেওয়া হয়। কিন পরবর্তীকালে জায়গিরদারি ব্যবস্থায় সংকট দেখা দেয়। এর পিছনে কতকগুলি কারণ ছিল।

মূল্যবান জায়গিরের প্রতি লোভ

মুঘল যুগে সমস্ত জায়গির একই মানের ছিল না। কোনো জায়গিরের জমি ছিল খুবই উর্বর এবং সেখানে প্রচুর শস্য উৎপাদিত হত। আবার কোনো কোনো জায়গির একেবারে অনুর্বর ছিল। এর ফলে মুঘল অভিজাতদের মধ্যে এই উর্বর ও মূল্যবান জায়গির লাভের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়ে যায় | দরবারে দলাদলি, ঘুষ প্রদান প্রভৃতি শুরু হয় যা মুঘল শাসনকে দুর্বল করে দেয়।

জায়গিরদারের সংখ্যা বৃদ্ধি

মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সময় থেকে জায়গিরদারের সংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। কিন্তু দেশে তার তুলনায় জায়গিরের পরিমাণ অনেক কম ছিল। এর ফলে কোনো ব্যক্তি মনসবদারি পদ পেলেও জায়গির লাভ করতে অনেক বছর লেগে যেত।

কৃষকদের ওপর শোষণ বৃদ্ধি

মনসবদার বা জায়গিরদার কোনো জমির ওপর স্থায়ী অধিকার পেত না। এর ফলে তারা জায়গিরের কৃষকদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের জন্য তাদের ওপর ব্যাপক শোষণ চালাত। এর ফলস্বরূপ মুঘল সাম্রাজ্যের মধ্যে কৃষকবিদ্রোহ শুরু হয়।

রাজস্ব আদায়ের পার্থক্য বৃদ্ধি

জায়গিরদারি ব্যবস্থার সংকটের অপর একটি দিক হল নির্ধারিত রাজস্ব এবং আদায় করা রাজস্বের পরিমাণের মধ্যে পার্থক্য ক্রমশ বেড়ে যেতে থাকে। এর ফলে কোনো সময়েই নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হত না।

সেনাবাহিনীর ওপর প্রভাব

মুঘল যুগে সেনা ও ঘোড়া রাখার বিনিময়ে জায়গির দেওয়া হত। কিন্তু জায়গিরের অর্থের পরিমাণ কম হলে অনেকক্ষেত্রেই জায়গিরদাররা নির্দিষ্ট সংখ্যার তুলনায় অনেক কম সেনা ও ঘোড়া রাখত। এর ফলে মুঘল সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে।

উপসংহার |
 পরিশেষে বলা যায় যে, মুঘল যুগে জায়গিরদারি প্রথার সংকটের পিছনে একাধিক কারণ ছিল। তবে মূল্যবান জায়গিরের প্রতি লোভ এবং প্রয়োজনের তুলনায় জায়গিরের স্বল্পতা এই সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছিল। পরিণামে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পতনের দিকে ধাবিত হয়। তাই বহু ইতিহাসবিদ জায়গিরদারি সংকটকে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন।


• >>>>>>>>>>>>>>

আকবরের ধর্মনীতি বা দীন-ই-ইলাহির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো
>>>>>>>>>>>>>>>

উত্তর


আকবরের ধর্মনীতি বা দীন-ই-ইলাহির মূল বৈশিষ্ট্য

মুচনা | ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে আকবর দীন-ই-ইলাহি ধর্মমত প্রবর্তন করেন। কিন্তু তার পূর্বে আকবর ইসলাম ধর্মের পণ্ডিতদের সঙ্গে ধর্মীয় বিষয় ব্যাখ্যা করেন। এরপর তিনি মহজরনামার ঘোষণা অনুসারে নিজেকে ইসলাম ধর্মের প্রকৃত ব্যাখ্যাকার হিসেবে ঘোষণা করেন এবং নিজের নামে খুৎবা পাঠ করেন। এর ফলে আকবর বহু প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হন। প্রভাবশালী মুসলমানরা এর বিরোধিতা শুরু করে। এই অবস্থায় আকবর ধর্মীয় ক্ষেত্রে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের কাছে এক গ্রহণযোগ্য ধর্মমত হিসেবে দীন-ই-ইলাহি প্রবর্তন করেন।

মূলকথা
‘দীন ই-ইলাহি’ অনুসারে আকবর নিজেকে পৃথিবীতে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে অভিহিত করেন। এটি ছিল একটি বিশুদ্ধ একেশ্বরবাদী ধর্ম। এই ধর্মের মূলকথা হল—নিরামিষ ভোজন, দানধর্ম পালন, পরস্পরকে 'আল্লাহো আকবর' সম্বোধন, আকবরের ছবি নিজের পাগড়িতে রাখা, আকবরের জন্য ধন মান প্রাণ বিসর্জন দেওয়া প্রভৃতি। ইতিহাসবিদ বদাউনির মতে, আকবর বহু মুসলমান বিরোধী অনুশাসন এই ধর্মমতে প্রচার করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ মুসলমানদের সাপ্তাহিক প্রার্থনা, রমজানের উপবাস, মসজিদ নির্মাণ, মক্কায় তীর্থযাত্রা প্রভৃতি তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু অনেক ইতিহাসবিদ এই মতামত মানতে রাজি নন। যাই হোক আকবরের এই দীন-ই ইলাহি ধর্মমত সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি। বিশ্বস্ত পরিষদরাও এই ধর্ম পছন্দ করেননি। মাত্র ২৪ জন এই ধর্মমত গ্রহণ করেছি

হিন্দুদের প্রতি উদার ব্যবহার

দীন-ই-ইলাহি ধর্মমত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় আকবর এই ধর্মনীতির দ্বারা সকল ধর্মের প্রতি সমান সহিঞ্চুতা দেখাননি। হিন্দুরা বেশি পরিমাণে উদার ব্যবহার পেয়েছিলেন। হিন্দুদের ধর্মকর ও জিজিয়া কর তুলে দেওয়া হয়। এমনকি এই সময় রাজপুতদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক চালু হয়েছিল। কিন্তু মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি কঠোরতা দেখানো হয়েছিল। আকবরের ধর্মনীতি অনুসারে মুসলমানরা ‘মহম্মদ’ নাম রাখার অধিকার হারায়। আরবি ভাষার চর্চা হ্রাস পায়। ইসলামীয় চান্দ্র মাস ও চান্দ্র বছর অনুযায়ী সময় গপনা রদ করে সৌর বছর অনুযায়ী সময় গণনা চালু হয়। সম্রাটের নিকট ভূলুষ্ঠিত প্রণামের রীতি চালু হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য আকবর সতীদাহপ্রথা নিষিদ্ধ করেন এবং বিধবাবিবাহ আইন চালু করেন।

ইসলাম বিরোধী ধর্ম
আকবরের ধর্মনীতি আলোচনা করে ইতিহাসবিদ ভিনসেন্ট স্মিথ দীন-ই-ইলাহিকে ইসলাম বিরোধী ধর্ম এবং একে আকবরের নির্বুদ্ধিতার চরম নিদর্শন বলেছেন। ইসলাম ধর্মের বহু কথা এতে স্থান পায়নি। তবে প্রকৃত অর্থে দীন-ই-ইলাহি ছিল সকল ধর্মের সারসংকলন মাত্র | কোনো বিশেষ ধর্মের প্রাধান্য বা ধর্মীয় সংকীর্ণতা এর মধ্যে স্থান পায়নি। এমনকি এই ধর্ম গ্রহণ করার জন্য আকবর কাউকে বাধ্য করেননি। তাঁর এই ধর্মের মূল কথা ছিল পরধর্ম সহিম্বুতা।

সর্বজনীন সহিষ্ণুতার নীতি
আকবর নতুন ধর্মমত প্রচার করতে গিয়ে গোঁড়া মুসলমান সম্প্রদায়ের বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন।
তবুও বলা যায়, আকবরের এই নীতি ছিল সর্বজনীন সহিন্নুতার নীতি | তাঁর এই ধর্ম ব্যর্থ হলেও এটি ছিল
উন্নত চিন্তাধারার নজির এবং দীন-ই-ইলাহি ছিল সর্বজনীন ধর্মমত। 




 দক্ষিনাত্যের ক্ষত বলতে কী বোঝ ? 

ঔরঙ্গজেবের আমলে মুঘল সাম্রাজ্যে যেসব সমস্যা দেখা দেয় সেগুলির অন্যতম ছিল দাক্ষিণাত্য ক্ষত।

দাক্ষিণাত্য ক্ষত: খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতকে ঔরঙ্গজেবের আমলে মারাঠাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। ঔরঙ্গজেব তাই দক্ষিণী রাজ্যগুলিকে জয় করার উদ্যোগ নেন। বিজাপুর, গােলকোন্ডা রাজ্যগুলি দখল করেন। এই দুই রাজ্য দখল করতে গিয়ে তাকে বহু বছর ধরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালাতে হয়। এর পরিণাম হিসেবে মুঘলদের বিপুল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। এই ক্ষয়ক্ষতিকেই দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলা হয়েছে।


ঔরঙ্গজেবের পতনে দাক্ষিণাত্য ক্ষতের ভূমিকা ---

[1] মারাঠা শক্তির উত্থান: ঔরঙ্গজেব বিজাপুর ও গােলকোন্ডা রাজ্য দুটি অধিকার করায়, মুঘল সাম্রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি পায়। সুদূর দিল্লি থেকে দক্ষিণে রাজ্যশাসন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে মারাঠা শক্তির উত্থান সহজ হয়।

[2] বিপুল অর্থব্যয় : দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে সম্রাটের দক্ষিণ ভারত অভিযানে মুঘলদের বহু সৈন্য নিহত হয় এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। 

[3] প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা : ঔরঙ্গজেবের দীর্ঘদিন দিল্লিতে অনুপস্থিতি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছিল। যার ফলে মালব, রাজস্থান, মথুরা, গন্ডােয়ানা, বিহার, বাংলা প্রভৃতি স্থানে মুঘলবিরােধী শক্তিগুলি ক্ষমতা দখল করতে তৎপর হয়।

[4] সৈন্যবাহিনীর ক্ষোভ : রাজকোশে তীব্র অর্থাভাব দেখা দিলে সেনাবাহিনীকে বেতন দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে তাদের মধ্যে কর্মপ্রেরণা হ্রাস পায় এবং ক্ষোভ বৃদ্ধি পায়। এইসব কারণে ভিনসেন্ট স্মিথ বলেছেন “দাক্ষিণাত্যে ঔরঙ্গজেবের শরীর ও সাম্রাজ্য উভয়ের কবর রচিত হয়েছিল |


No comments

Featured Post

Semester 2 History Suggestions - Questions Set-1 -স্নাতক ইতিহাস || History General Semester 2 - || History Suggestion for 2nd Semester of Calcutta University under CBCS System

   History  Suggestion for 2nd Semester of Calcutta University under CBCS System  History   Suggestions( BA General )  with Answer  Semester...

Powered by Blogger.