উত্তর :- ভূমিকা : ষোড়শ শতকের ইউরোপের জনসংখ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই বৃদ্ধির মূলে ছিল শান্তি ও শৃঙ্খলা। এই সময়কালে ইউরোপে কোন যুদ্ধ বিগ্রহ হয়নি। তাছাড়া প্লেগ বা অন্য কোনো মহামারির প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়নি। যার প্রভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছিল ব্যাপক কৃষি সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন। আলোচ্য সময়কালে আরো বেশি জমিকে কর্ষণের উপযোগী করে তোলা হয়েছিল। শুধু তাই নয় বনজঙ্গল কেটে কৃষি জমিতে পরিণত করা হয়েছিল। জলাভূমি নিষ্কাশন হয়েছিল এবং পশুচারণ ক্ষেত্রগুলিও চাষের জমিতে পরিণত করা হয়েছিল। উত্তর সাগর তীরবর্তী দেশগুলিতে সমুদ্রের জলরাশি নিষ্কাশনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল এমনকি বাঁধ নির্মিত হয়েছিল নেদারলান্ডের মতো নিচু দেশগুলিতে। ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় ৪৪ হাজার হেক্টর জমি সমুদ্রের গ্রাস থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। যাকে অর্থনীতিবিদগণ মূল্য বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করেছে।
• মূল্য বিপ্লবের পটভূমি : মূল্য বিপ্লব ষোড়শ শতকে সংঘটিত হলেও এর পটভূমি রচিত হয়েছিল পঞ্চদশ শতকে। ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্র দীর্ঘদিন যাবত আর্থ-সামাজিক অবস্থার স্থিতাবস্থা অক্ষুণ্ণ রাখতে সচেষ্ট হয়েছিল। কিন্তু পঞ্চদশ শতকের মধ্যভাগে ইউরোপের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নানা প্রকার পরিবর্তন। লক্ষ্য করা যায়। এই পরিবর্তনের প্রথম কারণ ছিল কনস্ট্যান্টিনোপলের পতন, যার ফলে রেনেসাঁস ও রেনেসাঁস প্রসূত মতবাদের উদ্ভব ও প্রসার সম্ভব হয়েছিল। এই পরিবর্তনের অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে ছিল জনস্ফীতি, সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বৃদ্ধি, ভৌগোলিক আবিষ্কার, উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা, পাশ্চাত্য জগত কর্তৃক নতুন বাজারের সন্ধান, বাণিজ্য বিস্তার, বাণিজ্যিক পুঁজি, শিল্প পুঁজি, প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদ আহরণ ও শোষণ প্রভৃতি উল্লেখ করা যায়।
পঞ্চদশ শতকে দীর্ঘকালব্যাপী দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ছিল। ষোড়শ শতক থেকে তা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। প্রায় ১০০ বছর পরে দ্রব্যমূল্য অনিশ্চিত হয়ে ওঠে। অর্থাৎ এটা কখনও বেড়েছে কখনও বা কমেছে। ১৪৬০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে দ্রব্যমূল্য ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৫২০ খ্রিস্টাব্দের পর বৃদ্ধির হার ছিল দ্রুত কিন্তু ১৬৫০ এর দশকে হল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়। ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দের পর স্পেনেও মূল্যবৃদ্ধি অনেকটাই রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। এই পর্বে অন্যান্য পণ্যের মূল্য যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল কিন্তু খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় এর বৃদ্ধি ছিল অপেক্ষাকৃত কম।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বা মূল্য বিপ্লবের জন্য মূলত আমেরিকা মহাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে ইউরোপে আমদানি করা সোনা ও রূপাকে দায়ী করা হয়। এই আমদানিকৃত সোনা ও রূপোর সিংহভাগ গলিয়ে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রায় রূপান্তরিত করা হয়েছিল। এর ফলে ইউরোপের অর্থভাণ্ডার ও রাজকোষে সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। বলা যায় এই প্রক্রিয়ার ফলে ইউরোপের বাজারে পণ্যদ্রব্য উৎপাদনের তুলনায় অর্থের যোগান অনেক বেশি বেড়ে গেলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে আর এই মুদ্রাস্ফীতি ছিল মূল্যবিপ্লবের প্রধান কারণ।
• মূল্য বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য : আলোচ্য সময়কালে চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছিল। এই যুগের মূল্য বিপ্লবের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ্য করা যায়।
➤ (১) মূল্যবিপ্লবের একটি মুখ্য ও সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধি। বলা যায় মূল্যবিপ্লবের ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যের দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছিল।
➤ (২) বিশেষ লক্ষ্যণীয় বিষয় যে খাদ্যশস্যের মূল্যের তুলনায় শিল্পজাত ও উৎপাদিত পণ্যের দাম তেমন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়নি।
➤(৩) উপরোক্ত দুই প্রক্রিয়ার ফলশ্রুতি হিসেবে খাজনার হার বৃদ্ধি এবং খাজনার বাণিজ্যকরণ ও ফাটকাবাজারীর প্রাদুর্ভাব হয়েছিল।
➤ (৪) তাছাড়া বিক্রয়যোগ্য পণ্য হিসেবে জমির চরিত্রের রূপান্তর ঘটেছিল। ইতিপূর্বে জমি ছিল মূলত ইজারা বা বাট্টা নেওয়ার ভূসম্পত্তি।
➤(৫) মূল্যবিপ্লবের ফলে পরবর্তীকালে গ্রাম অঞ্চলে একটি গ্রামীণ ভদ্র শ্রেণির উদ্ভব হয়। এরাই জমির মালিকানার সিংহভাগ অর্জন করে। শুধু তাই নয় এই শ্রেণি ইংল্যান্ডের জেন্ট্রি রূপে পরিচিতি লাভ করে।
• মূল্য বিপ্লবের প্রভাব : ষোড়শ শতকের মূল্যবিপ্লব ইউরোপে সর্বোচ্চ ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল। দ্রব্যমূল্যের বিস্ফোরণ ঘটার পূর্বে ইংল্যান্ডে তার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল। ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গে বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় কারণ জমিতে আর বর্ধিত জনসংখ্যার স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। ইতিমধ্যে অষ্টম হেনরির আমলে ইংল্যান্ডে মঠগুলি বিলোপ সাধন করা হলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং অর্থনীতির পর চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। মঠগুলির ধনসম্পত্তি জেন্ট্রি শ্রেণির হাতে আসে কিন্তু বাজারে এই বিপুল পরিমাণ ধনসম্প আগমনের ফলে মুদ্রাস্ফীতি প্রকট হয়ে ওঠে এবং অস্বাভাবিক রকম মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। এটা ছিল মূল্য বিপ্লবের অন্যতম কারণ। ইংল্যান্ডের এই মূল্যবিপ্লব ইউরোপে প্রসারিত হয়েছিল। ষোড়শ শতকের মূল্যবৃদ্ধি আগামীদিনে ইউরোপের বিপ্লবাত্মক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে এনেছিল। এর ফলে বাণিজ্যের দিক দিয়ে লাভবান এমন সব কৃষিজাত পণ্যের চাষবাস শুরু হয়েছিল ইউরোপীয় দেশগুলোতে। তামাক, ইক্ষু, তুলা, চা-কফি প্রভৃতির চাষাবাদ বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীকালে উপনিবেশগুলি এই চাষ লাভজনক ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শুধু তাই নয় এই মূল্য বিপ্লবের হাত ধরে ইউরোপীয় কৃষিক্ষেত্রে এনক্লোজার সিস্টেমের উদ্ভব হয়েছিল। পাশাপাশি ইউরোপের আর্থিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করেছিল এই মূল্য বিপ্লব।
➤মূল্যায়ন : সবশেষে বলা যায় মূল্য বিপ্লব ইউরোপে আগামী দিনের শিল্প মুনাফার মাত্রা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। শুধু তাই নয় মূল্যবিপ্লব উদ্যোগপতিদের আরো নতুন নতুন শিল্পে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেছিল। নতুন শিল্প গড়ে ওঠায় কর্মসস্থানের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছিল। বলাবাহুল্য এই এক্রিয়ায় পুঁজিবাদী বিকাশকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল কিন্তু মূল্যবিপ্লবের পর্বে শিল্পোৎপাদন তেমন ভাবে বৃদ্ধি পায়নি, বরং উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় শিল্পে একপ্রকার মতা দেখা দিয়েছিল।
=====================
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
প্রশ্ন: ভূমধ্যসাগর থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের অর্থনৈতিক বিবর্তন সংক্ষেপে আলোচনা করো।
বা, ষোড়শ শতক থেকে ইউরোপীয় অর্থনীতির ভরকেন্দ্র কীভাবে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আটলান্টিক সাগরীয় অঞ্চলে সরে যেতে থাকে।
উত্তর ঃ- ষোড়শ শতক ইউরোপের অর্থনীতি বিশ্ব ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই শতাব্দীতে ইউরোপের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের বেগ বৃদ্ধি পেয়েছিল। দ্বাদশ শতাব্দী থেকে ইউরোপীয় অর্থনীতি ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্তের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু চতুৰ্দশ শতকের পর থেকে ইউরোপের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইউরোপে যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল তা তীব্র খাদ্য সংকট তৈরি করেছিল। গবেষক পোস্টান ও হ্যামিলটন দেখেছেন যে কিভাবে ইউরোপের অর্থ সংকটের মূলে ছিল। সোনা ও রূপার কম যোগান। কিন্তু কালক্রমে ইউরোপ অর্থনৈতিক পরিবর্তনশীল অঞ্চলে পরিণত হয়।
পঞ্চদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থাৎ ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিদের হাতে কনস্ট্যান্টিনোপল অধিকৃত হলে বাজার হিসাবে ভেনিসের গুরুত্ব কমে যায়। মূলত কৃষ্ণসাগর ও ভূমধ্যসাগর তুর্কিদের দ্বারা অধিকৃত হলে ভেনিসের বাজার মার খেয়ে যায়। এই অঞ্চলে তুর্কিদের আধিপত্যের কারণে ইউরোপীয়রা বিকল্প বাণিজ্যের পথের সন্ধান করতে থাকে। কেননা এই অঞ্চলে বাণিজ্যের অর্থ ছিল তুর্কিদের আক্রমণ, সমুদ্রযাত্রা ও ভৌগোলিক অভিযানের সূত্র ধরে ইউরোপীয়রা আটলান্টিক ধরে নতুন বাণিজ্যপথ খুঁজতে থাকে এবং এটাই হয় তাদের পরবর্তী কালের বাণিজ্যের মাধ্যম। এভাবে ভূমধ্যসাগর থেকে আটলান্টিক মহাসাগরে বাণিজ্যে রূপান্তরিত ঘটেছিল। ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে আটলান্টিক মহাসাগরীয় বাণিজ্য পথ ধরে ভাস্কো দা গামা ভারতের কালিকট বন্দরে উপস্থিত হন। এর ফলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বাণিজ্যে ভেনিসের ভূমিকা খর্ব হয়ে যায় এবং পর্তুগিজরা ইউরোপীয় বাণিজ্য ক্ষেত্রে এক নতুন বাণিজ্যিক ভূমিকা পালন করে।
ঐতিহাসিক ফার্দিনান্দ ব্রোদেল এবং ওয়ালার স্টেইন ষোড়শ শতকের ইউরোপের অর্থনৈতিক বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এ ব্যাপারে মূল আলোচ্য বিষয় হল বিশ্ব বাণিজ্য । ঐতিহাসিক ইমানুয়েল, ওয়ালার স্টেইন তাদের গ্রন্থ The Modern World System: "Capitalist agriclture and the origin of the European world economy in the sixteenth century" এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। সেই সময় মহাদেশ থেকে মহাদেশের অবান্তরের তথা দূরপাল্লার বাণিজ্য পরিচিত ছিল। প্রাচীনকালে ভারত বাণিজ্য, একইসঙ্গে ভারতবর্ষের সঙ্গে চীন ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য ছিল বিশ্ব বাণিজ্য। কিন্তু ষোড়শ শতকে সমগ্র ইউরোপ হয়ে ওঠে বিশ্ববাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র। ঐতিহাসিক হেনরি পিরেন, পল সুইগী মনে করেন সৌখিন দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ইউরোপ বাণিজ্যের উৎসে পরিণত হয়েছিল। Food and Fuel এর মতো অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পাল্টে দিয়েছিল ব্যবসায়িক ধারণাকে। এর ফলে ইউরোপে নতুন বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। যা ঐক্যগত বাণিজ্যের সৃষ্টি করেছিল।
ষোড়শ শতক থেকে ইউরোপে আন্তঃমহাদেশীয় বাণিজের সূচনা করেছিল। তুর্কিদের দ্বারা ভূমধ্যসাগর অধিকৃত হওয়ার পর থেকে আটলান্টিক মহাসাগর, ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে ইউরোপ, এশিয়া, আমেরিকা বাণিজ্যিক সম্পর্ক চলতে থাকে। এই বাণিজ্যে বহু কাঁচামাল প্রাচ্য থেকে সংগ্রহ করা হত। ইউরোপের অভ্যন্তরে পরিস্থিতি তথা সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা এই সময়ে ইউরোপের অর্থনৈতিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্ব বাণিজ্যের উত্থান ঘটেছিল। এই বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল স্পেন ও পর্তুগাল। কেননা প্রাথমিক পর্বে তারা ভৌগোলিক আবিষ্কারের পথিকৃৎ ছিলেন।
ঐতিহাসিক ওয়ালারস্টেইন ইউরোপকে এই বিশ্ব বাণিজ্যের core এলাকা বলে চিহ্নিত করেছিলেন (ইংল্যান্ড, হল্যান্ড ও ফ্রান্স)। এই অঞ্চলগুলিতে যেহেতু কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তাই সেখানকার বাণিজ্যও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়েছিল। কারিগরি শিল্পের বিকাশে এই অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। তবে এই অঞ্চলে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল দাস ব্যবস্থা যা আটলান্টিক সিস্টেমের বিশেষ অঙ্গে পরিণত হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে শস্য আমদানি রপ্তানি গোটা ইউরোপে ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছিল। ভূস্বামী ও কৃষকদের আয় বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল। চর্মজাত মাংস, চিজ, ফলমূল, সুরা এবং বহু বিচিত্র সব্জি ইউরোপের বাজারে পৌঁছে যায়।
ষোড়শ শতাব্দীতে বিশ্ববাণিজ্যকে সম্পূর্ণ করেছিল বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা। ব্যাঙ্কিং double entry book keeping, instrument of credit bill, insurance, exchange সহ একাধিক আর্থিক সংস্থা এই সময় গড়ে উঠেছিল। এগুলি সুদের বিনিময়ে ঋণ প্রদান করত । ফলে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আরও সুবিধা হয়েছিল। ইউরোপে এই বাণিজ্যের সূত্র ধরে ভূমধ্যসাগর অঞ্চল পুরানো গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে এবং এই জায়গায় আটলান্টিক বাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল। যা ষোড়শ শতকের পরবর্তী সময়ের বিশ্ব অর্থনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
No comments